ঢাকায় চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ হাজার অটোরিকশা

বিআরটিএ বলছে, সে সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগরীতে সরকার অনুমোদিত সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এসব অটোরিকশার সবই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে ঢাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশা নেই দেখানো হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় অবাধে চলাচল করছে আনফিট আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা, যার সংখ্যাও প্রায় ১৫ হাজার বলে জানিয়েছে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।

বেবিট্যাক্সি, টেম্পোর মতো টু-স্ট্রোকের গাড়িগুলো বদলে ২০০১ সালে ঢাকায় ১২ হাজার ৮২৬টি সিএনজি অটোরিকশা নামানোর অনুমতি দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে মিশুকের বদলে ঢাকায় নামানো হয় আরো প্রায় আড়াই হাজার সিএনজি অটোরিকশা। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় ২০০২ ২০০৩ মডেলের প্রায় ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা ঢাকায় নামানো হয়, যেগুলোর আয়ুষ্কাল ছিল নয় বছর। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে সেগুলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশাগুলো প্রতিস্থাপন শুরু হয়। প্রথমে এগুলোর চেসিস ইঞ্জিন নম্বর পরীক্ষা করে গ্যাস সিলিন্ডার খুলে রাখা হয়। এরপর চেসিস, ইঞ্জিন নম্বর নম্বর প্লেটগুলো গ্যাস কাটার দিয়ে মুছে দেয়া হয়। সব শেষে প্রতিটি খালি ফ্রেম এক্সকেভেটর (বুলডোজার) দিয়ে ধ্বংস করা হয়। ধ্বংস করা সিএনজি অটোরিকশার বিপরীতে মালিকদের সমসংখ্যক নতুন অটোরিকশা নিবন্ধন দেয়া হয়।

বিআরটিএর কর্মকর্তা সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঢাকার প্রায় সব সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কম-বেশি ৫০০টির মতো অটোরিকশা প্রতিস্থাপন হয়নি, যেগুলো আর চলাচল করছে না বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকায় এখনো মেট্রো নম্বর প্লেট নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে অনেক সিএনজি অটোরিকশা। বিআরটিএর হিসাবে সিরিজের নম্বর প্লেট নিয়ে ঢাকায় কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা চলার কথা নয়। যদিও সরেজমিন ঢাকার হাতিরঝিল, মহাখালী, গাবতলী, গুলশান, ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, খিলগাঁও, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলাচল করছে ঢাকা মেট্রো সিরিজের সিএনজি অটোরিকশা।

প্রতিস্থাপন হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে পুরনো সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এটিএম নাজমুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, বিআরটিএতে পুরনো সিএনজি অটোরিকশা ধ্বংস করার সময় অনেকেই সেগুলোর বডি কৌশলে সংগ্রহ করেছেন। পরে সেগুলোতে ইঞ্জিন লাগিয়ে চালাচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসন থেকে বিআরটিএর কর্মকর্তাসবার চোখের সামনে দিয়েই কাজটি করা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রো সিরিজ নিয়ে হাতিরঝিলে প্রতিদিন শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চালানোর নিয়ম হলেও হাতিরঝিলে সেসবের বালাই নেই। চালকের দুপাশে বসেন দুজন, পেছনে তিনজন। ভাড়া জনপ্রতি ২৫ টাকা। কোনোটিতেই নেই ভাড়া নির্ণয়ের মিটার। আসন থেকে স্টিয়ারিং হুইল সবই নড়বড়ে। আনফিট এসব ত্রিচক্রযানের গ্যাস সিলিন্ডারও মেয়াদোত্তীর্ণ। বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় বাড্ডা-রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজারের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়েই এসব সিএনজিতে উঠছেন প্রতিদিন।

অটোরিকশাগুলোর গ্যাস সিলিন্ডারের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দীর্ঘদিন চলার কারণে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে আসার পাশাপাশি বডি-ফ্রেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণে সিএনজি অটোরিকশাগুলোর প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, এমনটাই বলছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।

রাজধানীতে ঢাকা মেট্রো ছাড়া অন্য কোনো এলাকা থেকে নিবন্ধন পাওয়া সিএনজি অটোরিকশা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। তার পরও চলছে ঢাকা মেট্রো বাইরের সিএনজি অটোরিকশা। সবচেয়ে বেশি চলছে ঢাকা জেলা থেকে নিবন্ধন পাওয়া সিএনজি অটোরিকশাগুলো। এর বাইরে পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর মুন্সীগঞ্জ থেকে নিবন্ধন পাওয়া অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা ঢাকায় চলাচল করছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।

অন্যদিকে বিআরটিএ বলছে, ঢাকা মহানগরীতে বাইরের সিএনজি অটোরিকশা চালানোর যেমন সুযোগ নেই, তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা আনফিট সিএনজি অটোরিকশাও চলছে না। সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকায় কোনো অবৈধ কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে না। তার পরও আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব বিষয়ে যেমন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তেমনি পুলিশও তত্পর। ঢাকার রাস্তায় ১৫ হাজার অবৈধ-মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের তথ্যটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে বিআরটিএর পরিসংখ্যানেই ভরসা রাখছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন