করোনাকালে তরুণ নির্মাতারা একের পর এক খুশির সংবাদ দিচ্ছেন। সম্প্রতি আরো একটি সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন তরুণ নির্মাতা কেএম কনক। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লটারি’
কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল কাল্ট চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। উৎসবের আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট বিভাগে চলচ্চিত্রটি পুরস্কার পেয়েছে। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্রটি এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন লিফট-অব গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফেস্টিভ্যালের ফার্স্ট টাইম ফিল্মমেকার সেশনস, লিফট অব সেশন্স ও ফিল্মেরা মিউজিক অ্যান্ড অনলাইন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।
চিলেকোঠা ফিল্মসের ব্যানারে ‘লটারি’
কনকের প্রথম প্রডাকশন। আর প্রথমবারেই ঝুলিতে জমা হয়েছে কিছু অর্জন। এসব অর্জনে তার উচ্ছ্বাসও তাই কম নয়। তার কথার মধ্যেই তা ফুটে উঠল। টকিজকে কনক বললেন, ‘প্রথম প্রডাকশন প্রথম সন্তানের মতো। তাই ভালো লাগাটাও অনেক।’
স্বল্পদৈর্ঘ্যটি নির্মাণের সময় কি ভেবেছিলেন এমন একটা অর্জন ঝুলিতে যুক্ত হবে? ‘এতটা ভাবিনি। দু-চারটি উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্যটি জমা দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু কলকাতায় এটা পুরস্কার জিতবে এতটা আশা ছিল না। আশার তুলনায় একটু বেশিই সাড়া পাচ্ছি।’
চলতি বছর ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি লটারির শুটিং করেছিলেন কনক। টঙ্গী স্টেশন, উত্তরার দিয়াবাড়িতে ছবির শুটিং হয়েছে। স্টেশনে বেড়ে ওঠা দুই বন্ধুর গল্প ‘লটারি’। নির্মাতার ভাষ্যে, ‘আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছুর চাহিদা থাকে। তাদেরও আছে। একটি লটারিকে কেন্দ্র করে তাদের জীবনে নানা সংকট দেখা দেয়। ছবিটি দেখে দিনশেষে মনে হবে লটারিটাই তাদের জীবনে ছিল জঞ্জাল। আগের জীবনটাই ভালো ছিল। আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনে সবসময় সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হতে দেয় না। অল্পকিছু নিয়েও জীবনে ভালো থাকা যায়।’
এ বিষয়টাই মূলত ছবিটির মধ্য দিয়ে তুলে ধরতে চেয়েছেন নির্মাতা।
প্রথম প্রডাকশনের কাজ শুরুর আগে অনেক গল্পই হাতে পেয়েছিলেন কনক। কিন্তু সেসব তাকে টানেনি। অবশেষে এ গল্পটাই তাকে স্পর্শ করেছে। যদিও ছোট দুজন শিশুশিল্পীকে নিয়ে কাজ করা তার জন্য কঠিন ছিল। তবু তিনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে নাটক দেখতে পছন্দ করতেন কেএম কনক। নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি দীর্ঘদিন প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন নির্মাতা রেদওয়ান রনির সঙ্গে। বলা যায় এখানেই তার হাতেখড়ি। স্বল্পদৈর্ঘ্যটি নির্মাণ করতে গিয়ে রেদওয়ান রনির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কতখানি কাজে দিয়েছে, জানতে চাইলে অল্প কথায় কনকের উত্তর, ‘যা কিছু শেখা তা রনি ভাইয়ের কাছ থেকেই।’
চলচ্চিত্রের প্রতি একদল তরুণের তীব্র প্রেমের ফসল ‘কাঠবিড়ালী’ ছবি। এ ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন কনক। সামনে কি এ পথেই হাঁটবেন? “আমাদের একটা টিম রয়েছে। চিলেকোঠা টিম। আমরা ‘কাঠবিড়ালী’ ছবিটি করেছি। আমার ‘লটারি’ ছবিটি প্রযোজনা করেছেন কাঠবিড়ালীর নির্মাতা নিয়ামুল মুক্তা। আমাদের সবার পরিকল্পনা আসলে চলচ্চিত্র নিয়ে। শেখার পরিধিটা বাড়িয়ে আগামীতে নির্মাতা হিসেবেই কাজ করতে চাই।”
সদ্য নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করেছেন কনক। পথ এখনো অনেক বাকি। নিজে তরুণ, তাই বাকি সিনেমাপ্রেমী তরুণদের উদ্দেশে তার বার্তা, যা আমরা করতে চাই তার পেছনে লেগে থাকা জরুরি। নির্মাণের ক্ষেত্রে বাজেট অবশ্যই একটা বড় বিষয়। কিন্তু তীব্র ইচ্ছার কাছে তা খুব বড় নয় বলে মনে করেন তরুণ প্রজন্মের এ নির্মাতা। ‘কাঠবিড়ালী’
ছবির মধ্য দিয়ে সেটা তারা দেখিয়েছেন।
চিলেকোঠা ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ‘লটারি’ চলচ্চিত্রটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন আল-আমিন হাসান নির্ঝর, সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফাহিম, প্রডাকশন ডিজাইনার ছিলেন মুহাম্মাদ তাসনীমুল হাসান, মিউজিক করেন ইমন চৌধুরী, সাউন্ড ডিজাইন করেন রাজেশ সাহা, কালার করেছেন মাহবুব টিপু এবং সহকারী পরিচালনায় ছিলেন আতিকুর রাব্বি, কল্লোল কবির, কামরুল জিন্নাহ ও উইলসন তালুকদার।