জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জলাধার বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নতুন জলাধার নির্মাণ এবং বিদ্যমান জলাধারগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সারা দেশে যত খাল, বিল, হাওড়, পুকুর, নদ-নদী আছে, সবগুলোর যাতে নাব্যতা থাকে সেজন্য সেগুলো খনন করার পাশাপাশি সেগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন রক্ষা হবে, তেমনি মত্স্য উৎপাদনও বাড়বে। মানুষের চহিদাও আমরা পূরণ করতে পারব। গতকাল গণভবন থেকে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্মুখে নির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু কর্নার, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় পর্যটন ভবন এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্র্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। সেচ বা অন্যান্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেন ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে আমরা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে গবেষণা ছাড়া কোনো কাজেই উত্কর্ষ আনা সম্ভব না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখেছিলাম আমাদের গবেষণায় কোনো বিশেষ বরাদ্দই রাখা হতো না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ ছিল না এবং কোনো রকম প্রণোদনা দেয়া হতো না।

পান্থপথের দুই পাশে পুরো জায়গায় বিশাল বিল ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানেই করা হোক, প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেন রক্ষা করা হয়। এখানে একটা জলাধারও সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলাফল দেখি বসুন্ধরা ভবনে যখন আগুন লাগে। যে ভবনটি তৈরি হয়েছে একেবারে বিলের ওপর, সেখানে আগুন নেভানোর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি আনতে হলো সোনারগাঁও হোটেলের সুইমিং পুল থেকে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, উপজেলা থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশির ভাগই নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে সুপেয় পানি, নিরাপদ পানি স্যানিটেশন অর্থাৎ পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থায় ব্যবহারের বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পান্থপথের দুই পাশে পুরো জায়গাটা জুড়ে ছিল বিশাল বিল। আর ঠিক তার পাশে গ্রিন রোড, পানি ভবনের জায়গাটা। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে উন্নয়নের নামে জায়গাটা যে একটা বিশাল বিল এলাকা, এখানে একটা জলাধারও কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়নি। এজন্য আমি সবসময় নির্দেশ দিয়েছি যে যেখানে যে প্রতিষ্ঠানই করা হোক, প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন রক্ষা হবে, প্রকৃতিকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের দেশে বক্স কালভার্ট ফমুর্লাটাই হচ্ছে সবচেয়ে আত্মঘাতী। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে না এবং কিছুদিন পর নানা রকমের জটিলতাও দেখা দেয়।

তিনি বলেন, রাস্তা তৈরি করতে হলে এখন এলিভেটেড রাস্তা তৈরি করা যায়। নিচে জলযানও চলতে পারে, ওপরে রাস্তাও চলতে পারে। তার পরও এই বক্স কালভার্ট কেন করা হয়েছিল? কাদের পরামর্শে করা হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে আমি বলতে চাই না। কিন্তু সেই সমস্যাগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি উদ্ধার করতে। কিন্তু এত বছর পর কতটুকু হবে সেটা জানি না। তবু আমরা করে যাচ্ছি।

১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। যারা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হয়ে যায়, তারা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার দিকে যতটা দৃষ্টি দেয়, দেশের মানুষের উন্নয়নের দিকে ততটা দৃষ্টি দেয় না। প্রথম কিছুদিন জাতির পিতা যে ফসল লাগিয়ে গিয়েছিলেন, যে গাছ লাগিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ফসলই তারা ভোগ করেছে। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ আর এগোতে পারেনি।

নদী ড্রেজিং, নৌপথ চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের যে সংযোগ, বাংলাদেশ তার জন্য সবচেয়ে আদর্শ একটা জায়গা হতে পারে। যদি আমরা সেভাবে উন্নত করতে পারি। জাতির পিতা সবসময় বলতেন, তিনি বাংলাদেশকে প্রাচ্যের ?সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলবেন। ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে গেলে সুইজারল্যান্ডের ভেতর হয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের অবস্থানও ইন্টারন্যাশনাল এয়ার রুটের ভেতরে। আমরা সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগাতে পারি। তাহলে একদিকে পর্যটন শিল্প, অন্যদিকে এয়ারলাইননস খাত থেকে দেশের আয়ের সুযোগ বাড়বে। আমরা সরকারে আসার পর পর্যন্ত ১৩টি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে যুক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা গতিশীলতা পাবে, উন্নত হবে। মানুষের যাতায়াতও সহজ হবে। পাশাপাশি রেলপথ ব্যাপকভাবে সংস্কার উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। আমাদের বিমান যেন বিভিন্ন দেশে যেতে পারে, সেজন্য আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী আইনগুলো যথাযথভাবে প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিমানের ফ্লাইট চালুতে চুক্তি হয়েছে। আমরা যখন বোয়িং বিমানগুলো কিনেছি তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিমান নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রচেষ্টা ছিল। সেখানে অনেক বাঙালি বাস করছে। ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক, ঢাকা থেকে টরন্টো, ঢাকা থেকে টোকিও; বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেন আমরা সরাসরি যেতে পারি, সে ধরনের আধুনিক কিছু বিমানও আমরা কিনেছি। এখন সবার সঙ্গে একটা সমঝোতা করে এটাকে আরো উন্নত করতে হবে এবং যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এছাড়া পানি ভবন মিলনায়তন প্রান্তে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, ত্রাণ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন