গভীর মন্দায় নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি সংকোচন ১২.২%

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মন্দায় পড়েছে নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত উপাত্তে দেখা যায়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জুন প্রান্তিকে গত প্রান্তিকে রেকর্ড ১২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আগামী মাসে সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা অরডার্ন যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন নেতিবাচক খবরটি এল। খবর এএফপি।

নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা বলছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নিউজিল্যান্ডের জিডিপি ১২ দশমিক শতাংশ সংকোচন হয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড সংকোচন। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মার্চের শেষের দিকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ মে মাসের শেষের দিকে শেষ হয়, যার প্রভাব পড়েছে জুন প্রান্তিকের উপাত্তে।

নিউজিল্যান্ডের পরিসংখ্যান দপ্তরের মুখপাত্র পল পাসকো বলেন, ১৯ মার্চের পর থেকে নিউজিল্যান্ডের সীমান্ত বন্ধ থাকায় দেশটির অর্থনীতির কিছু খাতে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে রিটেইল, আবাসন, রেস্তোরাঁ পরিবহন খাত। অন্যান্য খাতের মধ্যে খাদ্য, পানীয় প্রয়োজনীয় সেবা কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে দশমিক শতাংশ সংকোচনের পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড সংকোচনে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি। তবে ১২ দশমিক শতাংশ যে সংকোচন হয়েছে, তা ১৬ শতাংশ সংকোচন পূর্বাভাসের চেয়ে কম। এছাড়া গত মে মাসের বাজেটে ২৩ দশমিক শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। পূর্বাভাসের চেয়ে কিছুটা ইতিবাচক ফলাফলের পেছনে অরডার্ন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কৃতিত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী গ্রান্ট রবার্টসন। আগামী ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন অরডার্ন।

রবার্টসন আরো বলেন, লকডাউন নীতিমালা শিথিল এবং ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে।

৫০ লাখ মানুষের দেশটিতে মাত্র ২৫ জন নভেল করোনাভাইরাসে মারা গেছে। মে মাসের শেষ নাগাদ কভিড-১৯ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে গত মাসে অকল্যান্ডে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেয়। মহামারী নিয়ন্ত্রণে মধ্য বামপন্থী অরডার্ন সরকার সফলতার দাবি করলেও বিরোধী দল ন্যাশনাল পার্টি বলছে, তারা দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিরোধী দলের অর্থ বিভাগের মুখপাত্র অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, লকডাউন সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নমনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গত জুন প্রান্তিকে শতাংশ সংকুচিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি। অরডার্ন সরকারের বাস্তববাদী পদক্ষেপ সুস্পষ্ট পরিকল্পনার অভাবে অর্থনীতিতে যতটা প্রভাব পড়ার কথা ছিল, তার চেয়ে অধিক পড়েছে। 

তিনি আরো বলেন, গত এক প্রান্তিকে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, আগামী কয়েক দশক তার প্রভাব রয়ে যাবে। আমাদের স্মরণকালের ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ পতন।

উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ সালে মন্দায় পড়ার পর ২০১০ থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের আগে পর্যন্ত অব্যাহত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটি।

কিউইব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জ্যারড কার বলেন, জুন প্রান্তিকে অর্থনীতি যেভাবে সংকুচিত হয়েছে তা অভূতপূর্ব। আমরা আগে কখনো এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাইনি। এটি সত্যি উদ্বেগজনক।

গত প্রান্তিকে সেবা খাতের রফতানি কমেছে ৪০ শতাংশ এবং ভোক্তাব্যয় কমেছে ১২ শতাংশ। এছাড়া বিনিয়োগ কমেছে ১২ শতাংশ। তবে নিউজিল্যান্ড সরকার আশা করছে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। এটাও সাম্প্রতিক বছরগুলোর রেকর্ড সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন