জেনেভায় মিশনগুলোকে রোহিঙ্গা নিয়ে ঢাকার চিঠি

বাংলাদেশকে আরো চাপ দিলে পরিস্থিতি বিপরীত হতে পারে

তাসনিম মহসিন

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। একদিকে বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত চাপ আসছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে। সম্প্রতি সাগরে ভেসে থাকা কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া, কভিড-১৯ চিকিৎসা দেয়ার নামে জাতিসংঘের চিকিৎসকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানো, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট টেলিযোগাযোগ সেবা চালু নিয়ে একাধিক তদবির শুনতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। অবস্থায় জেনেভায় থাকা বৈদেশিক মিশনগুলোতে পাঠানো চিঠিতে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা হালনাগাদ তথ্য পাঠায় ঢাকা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি বাংলাদেশকে আরো চাপ প্রয়োগ করে, তবে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে এতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

মিশনগুলোকে দেয়া চিঠিতে ঢাকা জানায়, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে অনেক ভারী বোঝা বহন করছে। পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আরো বোঝা বহন করার জন্য ক্রমাগত চাপ দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। যখন কভিড-১৯ নিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রাম করছে, তখনো বাংলাদেশের ওপর অযাচিত চাপ আসছে। বাংলাদেশের শত চেষ্টা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত, যা স্থানীয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করছে। পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ না করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। তা না হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যারা এতদিন ধরে রোহিঙ্গাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে।

চিঠিতে বাংলাদেশ আরো বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রাখাইন চীন প্রদেশে সহিংসতা বাস্তুচ্যুত বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি দৃঢ়সংকল্প পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা উন্নয়নের উদ্যোগ চরম ঝুঁকিতে পড়বে। সেই সঙ্গে তা আমাদের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষাকেও ব্যাহত করবে। পরিস্থিতিতে একটাই পথ রয়েছে। আর সেটা হলো অন্য দেশগুলোকে দায়িত্ব (রোহিঙ্গাদের) ভাগাভাগি করে নেয়া। কারণ এত বিশালসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেয়া বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সব দিক থেকেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ফলে কোনো দেশ যদি স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায়, বাংলাদেশ সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রসঙ্গে চিঠিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকাতে ইন্টারনেট সেবা টেলিযোগাযোগ এখনো সচল রয়েছে। তবে নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগজনক তথ্য থাকায় গতি সাময়িকভাবে মন্থর করে রাখা হয়েছে। উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধ, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, ঘৃণা উগ্র দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার এবং নারী মেয়েদের নিপীড়নের মতো ঘটনা সেখানে বসবাসরত স্থানীয় নিরীহ রোহিঙ্গাদের গুরুতর হুমকির সম্মুখীন করছে।

কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন চলছে জানিয়ে জেনেভাস্থ মিশনগুলোকে বাংলাদেশ বলেছে, কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও রাখাইন প্রদেশে বাছ-বিচার না করে আর্টিলারি বোমা বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ মার্চের পর থেকে ৩২ বেসামরিক নাগরিক নিহত ৭১ জন আহত হয়েছে। যার বেশির ভাগই নারী শিশু। এতে বাড়িঘরসহ বিদ্যালয়ও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। 

মিয়ানমারের মিলিটারি কার্যক্রম আরো বাস্তুচ্যুত মানুষ তৈরি করছে। সম্প্রতি মানবিক দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশ ৩৯৬ জন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারা অন্য দেশে আশ্রয়ের জন্য গেলে সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

চিঠিতে বাংলাদেশ জানায়, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুজনের নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। ক্যাম্পে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া রোধে আইসোলেশন সেবা কেন্দ্র তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পের মধ্যে কভিড-১৯ ঠেকাতে বেশকিছু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সাময়িকভাবে আইসোলেশন সহযোগিতা দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুধু জরুরি মানবিক সেবায় জড়িতদের ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এর জন্য কিউআর কোড যুক্ত গাড়ি ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন