করোনাভাইরাসের কষাঘাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিশ্বজুড়ে। মানুষ আতংকিত, ভীত সন্ত্রস্ত। জীবন নিয়ে বাড়ছে সংশয়। একদিকে
করোনার ভয় অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালা। দেশে দেশে কর্মহীন হয়ে
পড়ছে কোটি কোটি মানুষ।দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।
ফলে
কর্মহীন মানুষ নির্ভর ত্রানের উপর। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ নিয়ে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা। অভিযোগ আছে একই ব্যাক্তি বার বার ত্রাণ পাচ্ছে, আবার যারা হাত পাততে পারছে না তারা ত্রাণ পাচ্ছে না।এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণের বিকল্প উপায় খুঁজতে হচ্ছে। আমাদের সামনে অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১০ টাকার হিসাবধারী, মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারী ব্যাক্তিদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ভাতা। এ বছরের শুরুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অনুশাসন জারি করেছেন যাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সমস্ত ভাতা, বৃত্তি এবং
সরকারি সাহায্য প্রদান করা হবে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে।
আশা করা
যায় এই অনুশাসনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে আর কোনো প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে, দুঃস্থ নারীকে, কোমলমতি শিক্ষার্থীকে, শারীরিক বা
মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার কোনো বাংলাদেশিকে তার প্রাপ্য ভাতার জন্য রোদ-ঝড় মাথায় নিয়ে মাইলের পর মাইল রাস্তা পার হয়ে টাকা তুলতে যেতে হবে না। ভাতা নিমিষেই চলে যাবে যার যার ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে। দেশে নগদের মত রকেট, বিকাশ ছাড়া আরও অনেক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিকেদের বেতন ভাতা মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে রকেট, বিকাশ, নগদের মাধ্যমে প্রায় ২৬ লক্ষ একাউন্ট খোলা হয়েছে।সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় সাড়ে ৭
কোটি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট রয়েছে।মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা এখন অনেক সহজ করে দিয়েছে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমতাবস্থায় সাহায্য গ্রহণকারীর যদি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা যায় তাহলে
ত্রাণের সমপরিমাণ টাকা বিতরণ অনেক
সহজ এবং স্বচ্ছ হয়ে যায়। অথবা মাসিক ভিত্তিতে সুবিধাভোগীর একাউন্টে টাকা পৌঁছে দেয়া যায়। এ কাজটি করতে জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি হিসাবে ধরে নেয়া যেতে পারে।
এবিষয়ে নোবেল
বিজয়ী দম্পতি অভিজিত ও ডুফলো করোনায় দরিদ্র মানুষের উপর আঘাত কিভাবে কমানো যায় সেটার উপায় বলতে গিয়ে সরাসরি বললেন- "দরিদ্রের হাতে টাকা দিন"। হাতে টাকা পৌঁছানোর সহজ উপায় হচ্ছে তাদের মোবাইল একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া। খুব সহজ সমাধান। সে তার প্রয়োজন অনুযায়ী চাল, ডাল, তেল, নুন কিনে নেবে। আর সেটি করলে উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল
থাকবে। করোনার অন্যতম অনুষঙ্গ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হবে।সেদিকটি সরকারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিশ্চিত করবে।সাধারনত
ত্রান দেয়া হয় যখন সব যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে বা
এক্সচেঞ্জ সিস্টেম কাজ করে না।
অর্থাৎ টাকা থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ না
থাকায় কেনা সম্ভব হয়না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন অবস্থা নেই।তাই ত্রাণ না দিয়ে মোবাইলে টাকা দেয়াই অনেক যুক্তিযুক্ত হবে বলে অর্থনীতিবিদগণ বলে আসছেন।ক্রেতা বিক্রেতা উভয় পক্ষের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট থাকলে নগদ লেনদেন করতে হবে না। টাকা ধরতে ছুঁতে হবে না। এর মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের নব দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে এই করোনাকালে।সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এগিয়ে এসে ক্যাশলেস লেনদেনের বিষয়টি সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ায় আমরা আরেকধাপ এগিয়ে থাকব।
আনোয়ার ফারুক তালুকদার
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক