‘মেড
ইন
চায়না’ সস্তা শ্রম ও অল্প পরিসরে বৃহৎ উৎপাদনের জন্য বেশ পরিচিত।
কিন্তু বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে চীন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এর
প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, চীনের বর্তমান এ পরিস্থিতির ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
এদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও চীন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন অভিবাসী কর্মীকে চাকরিতে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করছে।
‘দ্য স্লিপিং জায়ান্ট: পোস্টারস অ্যান্ড দ্য চাইনিজ ইকোনমি’
শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
যেখানে ১৯২০-এর দশক থেকে শুরু করে ২০০০ দশকের গোড়ার দিকের প্রায় ৫০টিরও বেশি পোস্টার প্রদর্শিত হচ্ছে।
এ
পোস্টারগুলোতে পণ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রচার—সব কিছুই উঠে এসেছে।
প্রদর্শনীটির মধ্য দিয়ে চীনা অর্থনীতির ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর এটাই উপযুক্ত সময় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
‘সবাই জানে চীনের অর্থনীতি এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু।’ ম্যানহাটন পোস্টার হাউজের প্রধান কিউরেটর অ্যাঞ্জেলিনা লিপার্ট এ কথা বলেছেন। ‘কিন্তু এ প্রদর্শনী চীনা অর্থনীতির পেছনের ইতিহাস তুলে ধরেছে। চীনের বাজার কোথায় ছিল, আর আজকে কোথায় পৌঁছেছে—অনেক পোস্টারে এ বিষয়টি চিত্রিত হয়েছে। চীনের অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতি মূলত এ পোস্টারগুলোতে বর্ণিত হয়েছে’—তিনি যোগ করেন।
প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে স্টেফি ডুয়ার্ট।
কীভাবে বিদেশী সংস্থাগুলো চীনের বাজারে প্রসারিত হয়েছে, কীভাবে মাও জেদং চীনা নাগরিকদের কাছে তা পৌঁছে দিতে সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদকে ব্যবহার করেছে—এগুলো প্রদর্শনীতে বিস্তারিত ফুটে উঠেছে।
এ
সম্পর্কে লিপার্ট বলেন, ‘আমরা
শুধু একটি পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চাইনি।
এতগুলো পোস্টারের মধ্যে অনেক পোস্টার বিদেশী বাণিজ্যের প্রভাব বা বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কথা বলেছিল।’
‘বিদেশী
সংস্থাগুলো পশ্চিমা পণ্যগুলোকে অনেকটা জোর করে চীনের বাজারে পাঠিয়ে দেয়।
কিছু ক্ষেত্রে এসব পণ্য কাজে লাগে, বাকিগুলো লাগে না।
কমিউনিজম ক্ষমতায় আসার পর তারা এসব পণ্য প্রত্যাখ্যান করেছিল’—লিপার্ট বলেন।
শোয়ের প্রথমদিকের পোস্টারগুলোতে সাবান, মোমবাতি, ফ্যাব্রিক ডাই এমনকি শিশুদের নিয়ে তামাকের বিজ্ঞাপন তুলে ধরা হয়েছে।
সে
সময় কনডেন্স মিল্কের বিজ্ঞাপনের জন্য হাই ফ্যাশনের আকর্ষণীয়, বিনয় প্রকৃতির নারীদের ব্যবহার করা হতো—লিপার্ট বলেন।
১৯৩০-এর দশকের শেষ দিকে একটা পরিবর্তন ঘটে। এবং ১৯৪৯ সালে মাও জেদং ক্ষমতায় আসার পর বিষয়গুলো অন্যদিকে মোড় নেয়। তখন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাকে ছাপিয়ে চিন্তার পোস্টার তৈরি হয়েছিল। ১৯৭৭ সালের একটি পোস্টারে একজন গ্রামের কর্মীকে দেখানো হয়েছিল, যেখানে একটি বাক্য লেখা ছিল যে, ‘কঠোর পরিশ্রম ও উদ্ভাবন গ্রামাঞ্চলের শিকড়।’
১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের পোস্টারে একজন সৈনিককে লাল ল্যান্ডস্কেপে তুলে ধরে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘আমেরিকান
সাম্রাজ্যবাদকে অবশ্যই দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে চালিত হতে হবে।’ ১৯৭২ সালের আরেকটি পোস্টারে একইভাবে মার্কিনবিরোধী মনোভাব প্রতিধ্বনিত হয়।
পোস্টারে লেখা হয়েছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রের
পারমাণবিক বোমা কাগজের তৈরি বাঘ ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বর্তমান সময় থেকে শুরু করে ১৯৯০ ও ২০২০ সালের পোস্টারগুলো কম আকর্ষনীয়।
এসব পোস্টারে অল্প নান্দনিকতাসহ চীনা শিল্প ও নকশা, ক্ল্যাসিক্যাল কনসার্ট ও লোগো উৎসবের বিজ্ঞাপন তুলে ধরা হয়।
প্রদর্শনীটি গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
এটি চলবে আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে: রাইসা জান্নাত