শিশুতোষ অনুষ্ঠান নিয়ে তারকাদের আগ্রহ বাড়ছে

রুবেল পারভেজ

১৫ অক্টোবর ২০১৭। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলের জগতে পথচলা শুরু করে দুরন্ত টেলিভিশন। শিশুদের নিয়ে দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ শিশুতোষ চ্যানেল হিসেবে দুরন্তর যাত্রাকে অনেকেই তখন দুঃসাহস অ্যাখ্যা দিয়েছিল। তাদের শঙ্কা ছিল, মূলধারার প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন চ্যানেলগুলোই যেখানে মার খাচ্ছে, সেখানে শুধু শিশুদের নিয়ে রকম একটি ভিন্নধর্মী আলাদা টিভি চ্যানেল ঠিকঠাকভাবে এগোতে পারবে তো? মজার ব্যাপার হলো, টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) অন্যান্য দাপ্তরিক হিসাব অনুসারে চ্যানেলটি তার প্রায় আড়াই বছরের পথচলায় বেশ সফলতা পেয়েছে, সেই সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে নতুন নতুন দর্শক। এখন শুধু শিশু নয়, মা-বাবাদেরও অনেকে দুরন্তর নিয়মিত দর্শকে পরিণত হয়েছেন।

শিশুদের অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো চ্যানেলটির প্রতি আগ্রহীদের তালিকায় দেশের মূলধারার অভিনয় জগতের তারকাদেরও সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে বলে মনে করছেন টেলিভিশন চ্যানেলটির সঙ্গে যুক্তরা। নিয়ে চ্যানেলটির অনুষ্ঠান প্রধান মোহাম্মদ আলী হায়দারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, প্রতিনিয়ত দুরন্ততে শিশুদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তারকাদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের চ্যানেলে মঞ্চ টেলিভিশনের অভিনেতা, অভিনেত্রীরাই বেশি কাজ করেন। তাদের সবাই এখানে কাজ করতে ভীষণ আগ্রহী। দুরন্তর পর্দা পরিষ্কার, চ্যানেলটির অনুষ্ঠানশৈলীর ভিন্নতা শিশুদের প্রতি বাড়তি আগ্রহের কারণেই সম্ভবত তারা এখানে কাজ করতে চান।

এর বাইরে আরো একটি দিকে অনুষ্ঠান প্রধান চোখ রাখতে চাইলেন।অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেকেরই শিশুসন্তান রয়েছে। তারা তাদের মা-বাবাকে টিভি পর্দায় দেখতে ভীষণ আনন্দ পায়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের তুমুল আগ্রহের কারণেও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেকে এখানে কাজ করতে আগ্রহবোধ করেন।তার কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেন অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ কাজী নওশাবা আহমেদ। শতাব্দী বলেন, ‘আমার আট বছর বয়সী ছেলে দুরন্ত টিভির দারুণ ভক্ত। চ্যানেলটির অনেকগুলো কাজ আমি করেছি। এগুলোরও নিয়মিত দর্শক সে। তাই  শিশু-বিষয়ক কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে আমি সানন্দে রাজি হয়ে যাই।অন্যদিকে নওশাবা বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহের অন্যতম দুটি কারণের একটি আমার মেয়ে আমাকে টিভি পর্দায় দেখে খুশি হয়। এছাড়া চ্যানেলটির অন্য অনুষ্ঠানও উপভোগ করে। আরেকটি হলো, আমি আগে থেকেই শিশুদের মানসিক বিকাশে কাজ করে আসছি। সুযোগ পেলেই শিশুদের নিয়ে কাজ করি। শিশুদের বেড়ে ওঠায় অবদান রাখতেই আমি মূলত ওদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহবোধ করি।

শিশুদের নিয়ে কাজ করতে অন্যান্য তারকা অভিনয়শিল্পীরাও যে কতটা আগ্রহী সচেতন, এর বড় উদাহরণ দুরন্ত টেলিভিশনে প্রচারিত ধারাবাহিকগল্প শেষে ঘুমের দেশে নতুন পর্বটি দিয়ে দেয়া যেতে পারে। এতে বিভিন্ন চরিত্রে শিশুশিল্পীদের পাশাপাশি তারকা অভিনয়শিল্পীরাও অভিনয় করেছেন। ধারাবাহিকটি সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টায় প্রচার হয়।


গল্প শেষে ঘুমের দেশেধারাবাহিকের প্রতি পর্বে শিশুরা একটি নতুন গল্প জানতে পারে। মূলত শিশুর মনস্তত্ত্বের সঙ্গে সংগতি রেখে গল্পগুলো নির্বাচন করা হয়। বিখ্যাত শিশুসাহিত্য এবং বিভিন্ন দেশের প্রচলিত নানা গল্প নিয়েই আয়োজন। ধারাবাহিকটির পরিবারের বড় সদস্যদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী সরকার অপু, ডা. এজাজ, ত্রপা মজুমদার, অপর্ণা ঘোষ, মনোজ প্রামাণিক, আহসান হাবীব নাসিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মৌটুসী বিশ্বাস, কাজী নওশাবা আহমেদ মোমেনা চৌধুরীর মতো একঝাঁক তারকা।

পর্যায়ে টকিজ জ্যেষ্ঠ অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হলে তিনিও জুড়ে দেন রাজ্যের গল্প। শিশুদের নিয়ে বয়সে এসে কাজ করতে তিনি নাকি যারপরনাই আনন্দ আপ্লুত বোধ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন যে সময় যাচ্ছে তাতে শিশুদের দিকে বাড়তি মনোযোগ দেয়া অভিভাবকসহ বড়দের দায়িত্ব হয়ে গেছে। কোনোভাবেই শিশুদের উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। দেশের ভবিষ্যৎ সুনাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তোলার জন্য আমিও নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছি। যে কারণে শিশুদের নিয়ে যেকোনো শিক্ষামূলক আয়োজনে আমি কাজ করতে আগ্রহবোধ করি; অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই কাজ করি।

কথা সত্য, অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলে হাতেগোনা শিশুতোষ অনুষ্ঠানই নির্মিত হয়। কিন্তু আশার কথা, কম বাজেটের অনুষ্ঠান, স্বল্প পরিসরের মতো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিশুদের নিয়ে নির্মিত অনুষ্ঠানে কাজ করতে বেশির ভাগ অভিনয়শিল্পীরই আগ্রহ অনেক বেশি। দুরন্তর পথ ধরে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল অভিনয়শিল্পীদের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আরো নতুন নতুন শিশুতোষ অনুষ্ঠান উপহার দেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন