দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন আর্থিক সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

ধীরে ধীরে নতুন আর্থিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব, যা গণতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব রাখবে। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মেরভিন কিং শঙ্কার কথা জানান। খবর গার্ডিয়ান।

এক দশক আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা লর্ড কিং মনে করেন, নতুন চিন্তায় বাধা দেয়ার মানে হচ্ছে ২০০৮-০৯ এর বিশৃঙ্খলায় ফিরে যাওয়া। ব্রিটিশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রায় ধসে যাওয়ার মতো ক্রান্তিকালে বিওইর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক বৈঠকে বক্তৃতায় কিং বলেন, এক দশক আগে যে চিন্তাভাবনার কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো মৌলিক কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। আরেকটি অর্থনৈতিক সংকট একটি গণতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। মুদ্রানীতি নিয়ে নতুন রক্ষণশীলতা বহাল রেখে আমরা যদি মনে করি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদে আছে, তাহলে আমরা ধীরে ধীরে আসলে একটি সংকটের দিকেই এগোচ্ছি।

বিওইর বর্তমান গভর্নর মার্ক কারনির পূর্বসূরি কিং জানান, ১৯৩০-এর দশকে দেখা দেয়া মহামন্দার পর নতুন চিন্তা বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন এসেছিল। তিনি বলেন, বিষয়ে কেউই সন্দেহ করবে না যে আমরা আরেকটি রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অর্থনৈতিক নীতির মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে তুলনীয় প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে না। পরিস্থিতিটা পরিবর্তন করা আবশ্যক।

ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মনে করেন, রাজনৈতিক পরিবেশ সাম্প্রতিক ইতিহাসে খুব কম সময়ই এত তিক্ত ছিল। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ, হংকংয়ে অব্যাহত আন্দোলন-ধর্মঘট, আর্জেন্টিনা তুরস্কের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় সংকট এবং ইউরোর ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে ফ্রান্স জার্মানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক তিক্ততার প্রসঙ্গ টানেন। বিশ্ব ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বিশ্বের পুলিশম্যানের ভূমিকা পালন করেছিল, বর্তমানে দেশটি ওই দায়িত্ব পালনের সদিচ্ছা প্রকাশ করছে না।

বিশ্ব অর্থনীতি নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফাঁদে পড়েছে বলে মনে করেন কিং এবং মহামন্দা থেকে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, ২০০৮-০৯ সালের মন্দা থেকে ততটা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি।

তিনি মনে করেন, মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহূত মডেলগুলো অর্থনৈতিক নীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অকেজো। সেগুলো হচ্ছেবিশ্ব অর্থনীতিকে নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফাঁদ থেকে বের করে আনা এবং পরবর্তী আর্থিক সংকটের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।

তিনি বলেন, চাহিদা উৎপাদনের একটি বিকৃত ছাঁচের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে প্রবেশ করেছে এবং বেরিয়ে এসেছে। রকম নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে চাহিদার একটি উপাদান থেকে অন্য উপাদানে, এক খাত থেকে অন্য খাতে এবং এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সম্পদের পুনর্বণ্টন জরুরি।

অর্থনীতির কিছু অংশে অতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে, যেমন চীন জার্মানির রফতানি খাত এবং অগ্রসর অর্থনীতির বাণিজ্যিক সম্পদ (প্রপার্টি) খাত। এবং কিছু খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ রয়েছে, যেমন বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে অবকাঠামো বিনিয়োগ। মূলধন শ্রমউভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাধারণ আর্থিক প্রণোদনার বাইরেও বিস্তৃত নীতিগত পরিবর্তন আনা আবশ্যক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন