ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি

বেবি পাউডার প্রত্যাহার করছে জেঅ্যান্ডজে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ৩৩ হাজার বোতল বেবি পাউডার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে) যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো ওই পণ্যে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি পাওয়ায় পদক্ষেপ নিচ্ছে জেঅ্যান্ডজে। খবর রয়টার্স।

প্রত্যাহারের সংবাদে নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর শতাংশ কমে ১২৭ দশমিক ৭০ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন। অ্যাজবেসটসের উপস্থিতির কারণে এই প্রথম জেঅ্যান্ডজে তাদের বহুল জনপ্রিয় বেবি পাউডার বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এছাড়া মার্কিন নীতিনির্ধারকরাও প্রথমবারের মতো জেঅ্যান্ডজে বেবি পাউডারে অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। অ্যাজবেসটস একটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত, প্রাণঘাতী মেসোথেলিয়মার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

৩৩ হাজার বোতল বেবি পাউডার প্রত্যাহারের বিষয়টি ১৩০ বছরের পুরনো কোম্পানিটির জন্য সর্বশেষ ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে হাজারো মামলা ঝুলছে। বেবি পাউডারের পাশাপাশি অপিওয়েড, চিকিৎসাসামগ্রী অ্যান্টিসাইকোটিক রিসপারডালের জন্য মামলাগুলো চলছে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে।

রিসপারডালের ঝুঁকি পাত্তা না দেয়ায় গত সপ্তাহে একটি আদালত জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে ৮০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন। অবশ্য বিশাল ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত রায়টি উচ্চ আদালতে টিকবে না বলেই মনে করছে কোম্পানিটি আইন বিশেষজ্ঞরা।

জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা ঝুলছে, যেখানে বহু ভোক্তার অভিযোগ, জনসন বেবি পাউডারসহ অন্যান্য টেলকম পাউডারের কারণে তাদের ক্যান্সার হয়েছে। জেঅ্যান্ডজের নারী স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান . সুসান নিকলসন সাংবাদিকদের বলেন, অ্যাজবেসটসের উপস্থিতির বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা; যা আমাদের সর্বশেষ পরীক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

শুক্রবার কোম্পানিটি জানায়, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ছাড়া বেবি পাউডারগুলো তারা স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করছে। এক সংবাদ বিবৃতিতে জেঅ্যান্ডজে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত মাসে যে পরীক্ষা চালিয়েছিল, সেখানে তাদের ট্যালকম পাউডারে অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

এফডিএ এক বিবৃতিতে জানায়, সর্বশেষ পরীক্ষায় বেবি পাউডারের যে নমুনাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো চলতি বছর বাজারে ছাড়া হয়েছে। নমুনাগুলোয় অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এফডিএ বলছে, তারা তাদের পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এবং যে লটের পণ্যে অ্যাজবেসটস পাওয়া গেছে, সেগুলো ব্যবহার থেকে ভোক্তারা যেন বিরত থাকে, আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেঅ্যান্ডজে স্বীকার করেছে যে বেবি পাউডারে অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি নিয়ে ১৭ অক্টোবর সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে এফডিএ। তারা বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে এবং ম্যানুফ্যাকচারিং রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখছে। এছাড়া ওই পণ্য বিদেশে চালান হয়েছে কিনা, সেজন্য সরবরাহ উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

জেঅ্যান্ডজে আরো বলছে, যে নমুনাগুলোর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তার যথার্থতা যাচাইয়ে এফডিআইয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

জেঅ্যান্ডজের সুসান নিকলসন বলেন, এফডিএর পরীক্ষায় যে ধরনের অ্যাজবেসটসের উপস্থিতি পেয়েছে, তা যে খনি থেকে তারা ট্যাল্ক সংগ্রহ করে, সেখানে পাওয়া যায়নি। সাধারণত পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে নির্মাণ স্থাপনা শিল্প যন্ত্রপাতিতে এমন ধরনের অ্যাজবেসটস পাওয়া যায়। কোথায় দূষণটা হলো, তা জানতে ভালো করে তদন্ত পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বেবি পাউডার বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো তৈরিতে যে ট্যাল্ক ব্যবহার করা হয়, তা চীন থেকে এসেছে। প্যারিসভিত্তিক আইমেরিস এসএর একটি মার্কিন শাখা আইমেরিস ট্যাল্ক আমেরিকা এর সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছে। চীনা ট্যাল্ক নিরাপদ দাবি করে আসছে আইমেরিস জেঅ্যান্ডজে উভয়েই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন