মৃত্যুর তিন দশক পর নতুন অ্যালবামে ‘নুসরাতজি’

ফিচার ডেস্ক

ছবি: দ্য উইকি ফিড

নুসরাত ফতেহ আলি খানকে বলা হয় শাহানশাহে কাওয়ালি। ১৯৯৭ সালে তিনি যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন, তখন তার বয়স মাত্র ৪৮ বছর। অথচ এ অল্প সময়েই তাকে নিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য। তার গান এখনো শ্রোতার জন্য অপার্থিব প্রশান্তি হয়ে আসে। ভাসিয়ে নেয় আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর গত ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেল নুসরাত ফতেহ আলি খানের হারানো অ্যালবাম ‘চেইন অব লাইট’।

১৯৯০ সালের এপ্রিলে রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড স্টুডিওজে অ্যালবাম রেকর্ড করেছিলেন নুসরাত ফতেহ আলি খান। তবে দীর্ঘদিন অ্যালবামটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালে আর্কাইভ স্থানান্তরের সময় অ্যালবামের অ্যানালগ টেপ পাওয়া যায়। টেপ থেকে গানগুলো উদ্ধার করা হয়। কিংবদন্তি এ শিল্পীর অনন্য সৃষ্টিকে শ্রোতাদের সামনে হাজির করার জন্য নতুন অ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগ নেয় রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। সিডি ও স্ট্যান্ডার্ড এলপি আকারেই মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। 

গত ১৯ জুন অ্যালবামের একটি টিজার প্রকাশ করেছে রেকর্ড প্রতিষ্ঠান রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। অ্যালবামে নুসরাত ফতেহ আলী খানের সঙ্গে কাজ করেছেন আটজনের একটি দল। এতে হারমোনিয়াম নিয়ে ছিলেন ফররুখ ফতেহ আলি খান, তবলায় ছিলেন দিলদার হুসাইন, কোরাস সদস্য হিসেবে ছিলেন মুজাহিদ আলি, রহমত আলি, রাহাত আলি, আসাদ আলি, গোলাম ফরিদ ও খালিদ মাহমুদ। 

অ্যালবামে চারটি মৌলিক কাওয়ালি রয়েছে, যা আগে কখনো শোনা হয়নি। গড়ে ১০ মিনিট করে চারটি কাওয়ালির মোট বিস্তৃতি ৪১ মিনিট। গানগুলো যথাক্রমে ‘ইয়া আল্লাহ ইয়া রাহমান’, ‘আজ সিক মিত্রাঁ দি’, ‘ইয়া গাউস ইয়া মিরান’ ও ‘খাবরাম রাসিদ ইমশাব’। চারটি গানেই পুরাতন নুসরাতের স্বাক্ষর স্পষ্ট। প্রথম গানটি আল্লাহর প্রতি প্রশংসাবাচক, তৃতীয় গানটি প্রখ্যাত সুফি আবদুল কাদের জিলানিকে উদ্দেশ্য করে।

কাওয়ালির ৬০০ বছরের ঐতিহ্যকে বৈশ্বিক দরবারে তুলে ধরেছেন নুসরাত ফতেহ আলি। বর্তমানে বৈশ্বিক পরিসরে জনপ্রিয় মাধ্যম কাওয়ালি। কিন্তু সে জনপ্রিয়তার পেছনে তার অবদান নেহায়েত কম নয়। নুসরাত মঞ্চে উঠলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ করে রাখতে পারতেন দর্শককে। জেফ বাকলের মতো পশ্চিমা সংগীত তারকারা ছিলেন তার গানের ভক্ত। সংগীত তারকা পিটার গাব্রিয়েলের প্রতিষ্ঠান রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সঙ্গে তার সম্পর্ক মূলত গড়ে ওঠে ১৯৮৫ সালের দিকে। সে সময় তিনি ডব্লিউওএমএডি উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন। যৌথভাবে বের করেন সংগীত অ্যালবাম ‘প্যাশন’, যা চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি ‘লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট’-এ ব্যবহার করেন। পিটারের প্রতিষ্ঠান থেকেই ১৯৯০ সালে নুসরাত ফতেহ আলী খান ও কানাডিয়ান গিটারিস্ট মাইকেল ব্রুকের কাওয়ালি ফিউশন অ্যালবাম ‘মাস্ত মাস্ত’ প্রকাশ হয়েছিল। 

১৯৯৭ সালে মারা যান নুসরাত ফতেহ আলি। কিন্তু তার শ্রোতা এখনো বাড়ছে। স্পটিফাইয়ে মাসে ছয় মিলিয়ন শ্রোতা, ইউটিউবে সংখ্যাটি বিলিয়নের ওপর। তাকে নিয়ে পাকিস্তানের সাইনা বসির স্টুডিও থেকে একটা প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে ২০২৫ সালে, যার নাম উস্তাদ।

সূত্র: রোলিং স্টোন 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন