চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ

পাইকারিতে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম, কমছে পেঁয়াজ-চিনি-গমের

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের একাধিক মিল থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমেছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বিশ্ববাজারে বুকিং দর নিম্নমুখী হলেও দেশের পাইকারিতে ভোজ্যতেলের দাম টানা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় দাম বাড়ছে। তবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ, চিনি, গমসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম।

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্টের শুরুতে পাইকারি পর্যায়ে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েলের দাম ছিল হাজার ৯০০ টাকা। তবে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে হাজার ৩০০ টাকায় পৌঁছেছে। সমান দাম বেড়ে সুপার পাম অয়েল লেনদেন হচ্ছে হাজার ৪০০ থেকে হাজার ৪৫০ টাকায়। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে হাজার ১০০ টাকায়।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামের একাধিক মিল থেকে সরবরাহ আগের তুলনায় কমে গেছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি) খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

এদিকে টানা কয়েক সপ্তাহ বাড়ার পর কমতে শুরু করেছে আদা, রসুন পেঁয়াজের দাম। গতকাল প্রতি কেজি দেশী ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৫-১০৬ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ১১৪-১১৫ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় বাজারে পাকিস্তান, চীন মিসরের পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার পর এসব পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ১০ টাকা কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি মিসর চীনের পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ ১০-১২ টাকা কমে ৯০-৯৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে আসায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগামী রবি মৌসুম না আসা পর্যন্ত বাজারে প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কারণে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির প্রবণতা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি অবস্থায় স্থিতিশীল থাকায় আসন্ন মৌসুমে দেশে পেঁয়াজ চাষ উৎপাদন বাড়বে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে দাম অস্থিতিশীল। দেশের ব্যাংকগুলোয় ঋণপত্র খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। ফলে চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বাড়ছে। 

খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেল চিনির মতো ভোগ্যপণ্য বৃহৎ মিল মালিক ছাড়া আমদানির সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য নিত্যপণ্য ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও আমদানির মাধ্যমে সংকট নিরসন করতে পারেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় রাজনৈতিক সংকটের কারণে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান চাহিদার তুলনায় সরবরাহও দিতে পারছে না। কারণে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে বাড়ছে।

এদিকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাশাপাশি আদারও দাম কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি আদা ২০-৩০ টাকা কমে ১৮০ টাকায় নেমেছে। তবে রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা বেড়ে ২০০-২১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। চিনির দাম মণপ্রতি ২০-৩০ টাকা কমে হাজার ৪০০ থেকে হাজার ৪৫০ টাকায় নেমেছে। গমের দাম না কমলেও নিম্নমুখী অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। গত কয়েক দিন মণপ্রতি ভারতীয় রাশিয়ান গম লেনদেন হচ্ছে হাজার ৩০০ থেকে হাজার ৩২০ টাকায়। অন্যদিকে কানাডা থেকে আমদানি হওয়া গম লেনদেন হচ্ছে হাজার ৫৮০ থেকে হাজার ৬০০ টাকায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন