গবেষণা প্রতিবেদন

শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতায় প্রভাব ফেলছে ডিজিটাল ডিভাইস

বণিক বার্তা ডেস্ক

ডিজিটাল ডিভাইস বদমেজাজ নিয়ন্ত্রণে যে উপযুক্ত নয়, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়লে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য উপকৃত হবে ছবি: কে-টুয়েলভ টেক

শিশুদের রাগ বা জেদ নিয়ন্ত্রণে অনেক অভিভাবকই ডিজিটাল ডিভাইস হাতে তুলে দেন। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে তথ্য জানা গেছে। খবর নিউরোসায়েন্স নিউজ।

ফ্রন্টিয়ার্স ইন চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট সাইকিয়াট্রিতে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা জানান, শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণে তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট তুলে দিলে তা আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইসের পরিবর্তে অভিভাবকরা যদি আবেগ নিয়ন্ত্রণে সন্তানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন বা আলোচনা করেন সেটি মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়।

গবেষকরা বলছেন, জীবনের প্রথম কয়েক বছর শিশুরা আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অনেক কিছু শিখে থাকে। সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল, মানসিক আচরণগত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তারা জানতে পারে শেখার চেষ্টা করে, যা মূলত মা-বাবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্কের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে।

হাঙ্গেরি কানাডার গবেষক দলটি জানায়, বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস শিশুদের এমন আচরণ ঠেকানোর জন্য যে একেবারেই কার্যকর নয়, সেটি সবাইকে বোঝাতে পারলে তা মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থতা উভয় ক্ষেত্রের জন্য ইতিবাচক হবে।

হাঙ্গেরির ইওটভোস লোরান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক . ভেরোনিকা কনক বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে আমরা অভিভাবকদের এটি দেখাতে চেয়েছি, শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণে ডিভাইসের ব্যবহার নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি ভবিষ্যতে রাগ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতাকে আরো দুর্বল করে তুলবে।

কানাডার ইউনিভার্সিটি ডি শেরব্রুকের অধ্যাপক ক্যারোলিন ফিটজপ্যাট্রিক বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি, সন্তানের মন খারাপ হলে মা-বাবারা তাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে তাদের হাতে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন তুলে দেন। শিশুরা ডিজিটাল কনটেন্টে সহজেই আকৃষ্ট হয়, যা তাদের বদমেজাজ বন্ধ করার সহজ একটি উপায়। আর স্বল্পমেয়াদে এটি ভালোই কাজে আসে।

তিনি জানান, বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস যে বদমেজাজ নিরাময়ের জন্য অনুপযুক্ত হাতিয়ার, সে বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থতা দুই- উপকৃত হবে।

গবেষণাটির জন্য ২০২০ সালে একটি মূল্যায়ন এর এক বছর পর একটি ফলো-আপ পরিচালনা করেছিলেন গবেষকরা। এজন্য দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী তিন শতাধিকের বেশি শিশুর বাবা-মা একটি প্রশ্নমালার উত্তর দিয়েছেন, যেখানে শিশু মা-বাবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারের বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, মা-বাবারা শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিলে এর এক বছর পর গিয়ে দেখা যায়, তাদের রাগ হতাশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এছাড়া যাদের বেশি সময় ডিভাইস দেয়া হয়েছে তারা পরবর্তী সময়েও সেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

. ভেরোনিকা কনক জানান, ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর বিপরীতে রাগ, ক্রোধ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে অভিভাবকই প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারবেন।

গবেষক দলটি জানায়, ভবিষ্যৎ জীবনে যেসব শিশু তাদের ক্রোধ বা রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইসের সখ্যের বিষয়টি সুস্পষ্ট। তাই যেসব বিষয় শিশুকে রাগান্বিত করে, সেগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয় বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন