প্রোটিয়া-আফগান লড়াই

ভারতের প্রতিশোধ নাকি ইংল্যান্ডের পুনরাবৃত্তি?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত
Default Image

নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মঞ্চ তৈরি। আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদে প্রথম সেমিফাইনালে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি অদম্য আফগানিস্তান। রাত সাড়ে ৮টায় গায়ানায় দ্বিতীয় সেমিতে লড়বে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও হট ফেভারিট ভারত। 

দ্বিতীয় সেমিফাইনালটা যেন গত আসরের পুনরাবৃত্তি। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর অ্যাডিলেড ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানের পুঁজি গড়ে ভারত। ১৬৯ রানের টার্গেটটাকে কোনো পাত্তাই দিল না ইংলিশরা! রোহিত শর্মার দলের বোলিং আক্রমণকে একেবারে চূর্ণ করে দিয়ে তারা ম্যাচটা জিতে নেয় ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে, তাও ২৪ বল হাতে রেখে। 

অ্যালেক্স হেলস ৪৭ বলে ৮৬ ও বাটলার ৪৯ বলে ৮০ রান করেন। দুর্বার এ ইংল্যান্ডের সামনে ফাইনালে টিকতে পারেনি পাকিস্তান। ৫ উইকেটের জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির মুকুট জিতে নেয় ইংলিশরা। 

টানা দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে অপরাজিত দল ভারত। গতবারের মতোই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ইংলিশ দলনায়ক বাটলার। লড়াইয়ের মঞ্চ এবার অ্যাডিলেডের জায়গায় গায়ানা। এবারো কি ইংলিশদের রাজত্ব, নাকি ভারতের প্রতিশোধ?

গত আসরের মতো এবারো ফিনিক্স পাখির মতোই ভস্ম থেকে জেগে উঠেছে ইংলিশরা। ‘বি’ গ্রুপে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে তাদের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিও বৃষ্টিতে চোখ রাঙায়। ম্যাচটি পণ্ড হওয়া মানে ইংলিশদের বাড়ি ফিরে যাওয়া। তাই বাটলারদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা শুরু। ম্যাচ শুরুর শেষ সময় থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট দূরে ছিল তারা। অবশেষে বৃষ্টি থামলে ১০ ওভারের খেলা মাঠে গড়ায়। ডিএলএস মেথডে ৪১ রানের জয়ে টিকে থাকে ইংল্যান্ড। 

এখানেই শেষ নয়। গ্রুপ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮১ রানের টার্গেট দেয় স্কটল্যান্ড। জিতলেই স্কটিশরা সুপার এইটে উঠবে, বিদায় নেবে ইংল্যান্ড। এবারো বেঁচে গেল বাটলারের দল। এ রান তাড়া করতে নেমে অজিরা ৫ উইকেটে জিতে যায়। স্কটল্যান্ডকে নিট রানরেটে পেছনে ফেলে ইংল্যান্ড উঠে যায় সুপার এইটে।

কঠিন পরীক্ষা দিয়ে সুপার এইটে আসা দলটি দুই জয়ে পায় সেমিফাইনালের টিকিট। এবার তাদের ফাইনালের পথে বড় বাধা ভারত, যারা চলতি আসরের দ্বিতীয় অপরাজিত দল। ফ্লোরিডায় কানাডার সঙ্গে তাদের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। এছাড়া বাকি ছয়টি ম্যাচই জিতেছেন রোহিতরা। অধিনায়ক রোহিত রয়েছেন আগুন ফর্মে। গত ম্যাচে ৪১ বলে ৯২ রান করে অজিদের হারানোর নায়ক তিনিই। জশপ্রীত বুমরাহর নেতৃত্বাধীন বোলিং ব্রিগেডও দুর্দান্ত ফর্মে। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চারবারের মুখোমুখিতে দুটি দল সমান দুটি করে জয় পেয়েছে। আর সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৩ বারের মুখোমুখিতে ভারত ১২টি ও ইংল্যান্ড ১১টি জিতেছে।

এদিকে, আজ সকালে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের অনেকের ঘুম ভাঙার আগেই প্রথম ফাইনালিস্ট নির্ধারণ হয়ে যাবে। ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় লড়বে প্রথম শিরোপার আশায় খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা ও প্রথমবার সেমিতে উঠে ইতিহাস গড়া আফগানিস্তান।

টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মাত্র দুবার দেখা এবং দুটিই বিশ্বকাপে। ২০১০ সালে বার্বাডোজে ৫৯ রানে ও ২০১৬ সালে মুম্বাইয়ে ৩৭ রানের জয় পায় প্রোটিয়ারা। 

সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেছেন, তারা সেরা ক্রিকেট এখনো খেলেননি! তার মানে, আফগানিস্তানকে সর্বস্ব নিংড়ে দিতে হবে। যদিও প্রোটিয়াদের জন্য ভয়ের কারণ তাদের নিজেদেরই ইতিহাস। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো বিশ্বকাপেই সেমিফাইনালের গণ্ডি কোনোদিন পেরোতে পারেনি তারা। এ রেকর্ডই প্রোটিয়াদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক বাধা, আবার এটিই আশা দেখাবে আফগানদেরও।

চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাঁচটি জয় পেয়েছে আফগানিস্তান, যার মধ্যে চারটিই এসেছে আগে ব্যাটিং করে। এর মধ্যে প্রতিপক্ষই তিনবার তাদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। তারা শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে। অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে শেষ পর্যন্ত তারাই ৮ রানের জয়ে সেমিতে নাম লেখায়। 

আবার পরে ব্যাটিং করা দুটি ম্যাচেই হেরেছে আফগানিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে বোলিং নেয় আফগানরা এবং ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে টস হেরে বোলিং পায় তারা। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে যে ম্যাচটিতে তারা আগে ফিল্ডিং করেও জিতেছে, সেটির ভেন্যু ত্রিনিদাদ। এর পরও তারা আগেই ব্যাটিং করতে চাইবে। তাই ত্রিনিদাদে আজ টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এ বিশ্বকাপে অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা টানা সাত ম্যাচে জিতেছে। ভারত ছয়টি জিতেছে, একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। প্রোটিয়ারা চার ম্যাচে আগে ব্যাট করে ও তিন ম্যাচে রান তাড়া করে জিতেছে। 

আফগানদের আগে ব্যাটিং দিলে বিপদ হতে পারে, সেটি নিশ্চয়ই জানা আছে প্রোটিয়াদের। কেননা রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ওপেনিং জুটি এ বিশ্বকাপের সেরা। তারা জুটি বেঁধে সর্বোচ্চ ৪৪২ রান করেছেন প্রায় ৭৪ গড়ে। দ্বিতীয় সেরা ওপেনিং জুটি ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও ফিল সল্ট ২৮৬ রান করেছেন ৫৭.২০ গড়ে। 

রান চার্টেও গুরবাজ (২৮১) শীর্ষে, জাদরান (২২৯) তিনে। বিদায় নেয়া অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ২৫৫ রান করে দুইয়ে আছেন। সেমিতে টিকে থাকা দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক ১৯৯, ভারতের রোহিত শর্মা ১৯১, ইংল্যান্ডের জস বাটলার ১৯১ ও একই দেশের ফিল সল্ট ১৮৩ রান করেছেন।

গুরবাজ ও জাদরান জুটির কথা ভেবে হলেও আফগানিস্তানকে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ দেবে না হয়তো প্রোটিয়ারা। কেননা এ জুটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে হারানোর নায়ক। সর্বশেষ অজিদের বিপক্ষে ১৫.৫ ওভার ব্যাট করে ১১৮ রান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০.৪ ওভার ব্যাট করে ৫৯ রান তুলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন দুজন। 

আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা গুরবাজ চলতি বিশ্বকাপে স্বভাবসুলভ মারমুখী ব্যাটিং করে যাচ্ছেন, অপর প্রান্ত ধরে রাখার দায়িত্বটা পালন করেন জাদরান। বাংলাদেশের বিপক্ষে উইকেটকিপিং করার সময় হাঁটুতে চোট পান গুরবাজ। তিনি সেরে না উঠলে সেমিফাইনালে তাকে পাবে না আফগানিস্তান। আর যদি ফিট হয়ে তিনি খেলেন, তবে তাকে থামানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে প্রোটিয়া বোলারদের। 

দুই দলই ইতিহাস লিখতে মরিয়া। প্রোটিয়ারা বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হয়েও কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ওয়ানডেতে পাঁচবার ও টি-টোয়েন্টিতে দুবার সেমিফাইনাল খেলেও কখনো ফাইনালে ওঠা হয়নি তাদের। এবার মার্করামের হাত ধরে নতুন ইতিহাস লিখতে পারবে কি প্রোটিয়ারা? আশার পালে হাওয়া দিচ্ছেন মার্করামই। ২০১৪ সালে তারই নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন