![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_389456_1.jpg?t=1719856929)
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে
দীর্ঘস্থায়ী করবে বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের
(জিএম কাদের)। তিনি বলেন, বাজেটে অবৈধ অর্থ অর্থাৎ কালো টাকাকে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ
না দেয়ার প্রস্তাব করছি। আর এ সুযোগ দিতে হলে ন্যায় বিচারের স্বার্থে ৩০ শতাংশের
উর্ধ্বে, অর্থাৎ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর দেয়ার বিধান রাখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো
টলারেন্স নীতি কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
আজ শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ
আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে
তিনি আরো বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ী যারা বিপুল অংকের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিকমতো
দেননি, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তারা ধরা পড়েন ও খেসারত দেন। যারা
ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাবনিকাশ করেই তা করেন। সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না।
সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের ওপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ
৩০ শতাংশ, সেখানে অবৈধ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলেই বৈধ হওয়া যেমন অনৈতিক তেমনি যুক্তিসঙ্গত
নয়।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে খুব
বেশি অংকের রাজস্ব আসে না। কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ করবে না এবং
রাজস্ব আদায়ে বেশি ভূমিকা রাখবে না। তারপরও ঢালাওভাবে অবৈধ আয়কে এ ধরনের দায়মুক্তি
দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনো করা হয়নি। তিনি বলেন, অসৎ ব্যক্তিরা সরকার পরিবর্তনের ভয়ে নিজের
দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে সাহস করত না। পরবর্তী সরকার এলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা
ছিল। এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় সরকারি দল ও তাদের পছন্দমতো মানুষরা জয় লাভ করে সরকার
গঠন করে চলেছেন। ফলে সরকার পরিবর্তনের কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে কালো টাকার
মালিকরা অবৈধ অর্থের মুনাফা চান না, তারা তাদের অর্থের নিরাপত্তা চান। এভাবে দায়মুক্তি
দিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির যে দুষ্টচক্র তৈরি হবে, তা থেকে
ভবিষ্যতে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলে যাচ্ছেন দুর্নীতিতে জিরো
টলারেন্স নীতি। কিন্তু দুর্নীতি সব ক্ষেত্রে বেড়েই চলেছে- সে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা আমলা হোক। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। বরং অর্থনীতিতে
যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আমাদের অর্থনীতি এখনো প্রতিদিন নিম্নগামী উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, বিশ্বব্যাপী কভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি এখনো প্রতিদিন নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের
পতন, রফতানির সীমিত প্রবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান
সুদের হার, উচ্চ নন-পারফর্মিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস,
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর
অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশী বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির
গতি হ্রাস বড় কারণ।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায়
রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের
রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে। রফতানি আয় ও প্রবাসী আয় যতক্ষণ না দেশের
মোট আমদানি ব্যয়ের সমান বা বেশি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রিজার্ভের ক্রমাবনতি অব্যাহত
থাকবে। এরই মধ্যে আইএমএফের ঋণের ছাড় ও অন্যান্য বিদেশী সাহায্য বা অন্যান্য ঋণের অর্থে
হঠাৎ রিজার্ভ বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এ রিজার্ভ আবার কমতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না
রফতানি ও প্রবাসী আয় আমদানি ব্যয়ের চেয়ে বেশি থাকবে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে
ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়। একইসঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতি হয়। ফলে আমদানি ব্যয়
সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে
রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দেবে।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সংকটময়
বলা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে কমবেশি অর্থনৈতিক মন্দা চলছে ও যা থেকে প্রায়
দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি চলমান। ফলে আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক
দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোনো দিকনির্দেশনা বা উদ্যোগ এ বাজেটে নেই। সবগুলো না
হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে
বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে করে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের
পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বাড়বে।
ব্যাংক ঋণ নির্ভর বাজেট উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ব্যাংক খাতের
যে খারাপ অবস্থা তার প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ। এ বিষয়ে অতিসম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী
ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগের ধাপ ওভারভিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ। আর চলতি ২০২৪ সালের মার্চে
খেলাপি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। খেলাপির সঙ্গে
মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ধরলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়ায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।