৬২ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা এখনো ব্যাংক ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছেন

ছবি : বণিক বার্তা

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৯৮৩ সালে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ পান মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এমএসএমই খাতে উদ্যোক্তারা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন তা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি

দেশের এমএসএমই খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।

এ মুহূর্তে এসএমই খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দারিদ্র‍্য বিমোচন, উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানিনির্ভরতা হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এসএমইর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এমএসএমই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বর্তমানে এ খাতের মাধ্যমেই অর্জিত হচ্ছে মোট দেশজ (জিডিপি) উৎপাদনের ২৫ শতাংশ। স্বল্প পুঁজিতে, স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের অনন্য ব্যবস্থা হলো এমএসএমই খাত। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ এ খাতেই নিয়োজিত। অন্যদিকে শিল্পসংস্থানের ৮০ শতাংশ অবদান রাখছে এ খাত।

দক্ষতার ঘাটতি ও যথাযথ তথ্যের অভাবে এমএসএমই উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব অন্যতম। এ ঘাটতির কারণে এমএসএমইর উদ্যোক্তাদের দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৩৮ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। বাকি ৬২ শতাংশ এখনো ব্যাংকে যাননি কিংবা ঋণ পাননি। ৪৯ শতাংশ উদ্যোক্তার এনজিও থেকে ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ৫১ শতাংশেরই এনজিও থেকে ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা নেই। এসএমই খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করা, আর্থিক ও নীতিসহায়তা প্রদান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইনের সংশোধন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নসহ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত প্রয়োজন। এসব পদক্ষেপ এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

ভবিষ্যতে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের পরিকল্পনা কী?

এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন, যেমন সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নীতি ও নিয়ন্ত্রকের সমস্যা, অর্থায়ন, অবকাঠামো ও দক্ষতা। এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এমএসএমই খাতের এ চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামী ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন বিনিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছে, যা আর্থিক সমস্যা মোকাবেলায় সহায়ক হবে। এছাড়া ছোট উদ্যোক্তাদের এসএমই বিনিয়োগ প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য ক্লাস্টারভিত্তিক বিনিয়োগ প্রদান করছে। উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসএমই সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের মতো কাজ করে যাচ্ছে।

এমএসএমই খাতের ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছেন উদ্যোক্তারা?

বলতে গেলে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আগের তুলনায় আরো ব্যাপকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসার দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াচ্ছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসার খরচ কমাচ্ছেন এবং অধিক মুনাফা করতে পারছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন বিপণন, ই-কমার্স প্লাটফর্ম, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য ও সেবার বাজার বিস্তার করছেন। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে তারা গ্রাহকসেবা উন্নত করছেন, যা গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়াচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ডাটা বিশ্লেষণ ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স টুলস ব্যবহার করে এসএমই উদ্যোক্তারা বাজারের প্রবণতা বুঝতে পারছেন এবং সে অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এমএসএমই খাতের উন্নতির জন্য অত্যন্ত সহায়ক হচ্ছে এবং ক্রমান্নয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে।।

এমএসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন?

এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য যথাযথ মানের পণ্য উৎপাদন ও সেগুলোর উপযুক্ত দাম পাওয়া নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের উচিত মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা কমিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য সরাসরি বাজারে প্রবেশের পথ সুগম করা। এসএমই ঋণের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি, ঋণের শর্তাবলি সহজীকরণ ও অভীষ্ট গ্রাহকদের ঋণ অধিগম্যতা বৃদ্ধিকল্পে সরকারের নির্দেশনা প্রদান। এছাড়া উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগত মান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। বিদেশে রফতানি বৃদ্ধি বাড়াতে সরকারের উচিত রফতানি বাজারের জন্য পণ্যের মান নির্ধারণ ও সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা করা। উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান, পণ্য উন্নয়ন, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল উন্নয়নে সহায়তা প্রদান। সর্বোপরি, সরকারের উচিত এসএমই খাতের জন্য একটি সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিবেশ তৈরি করা, যাতে এ খাতের উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য ও সেবা দিয়ে সফলভাবে বাজারে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন