এসএমই খাতের উন্নয়নে অর্থায়ন সুবিধাপ্রাপ্তি আরো সহজ করা জরুরি

ছবি : বণিক বার্তা

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটি ১৯৯২ সালে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকটি করপোরেট ব্যাংকিং সেবায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ব্যাংকটি ২০০৫ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয়। ৮৯টি শাখায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি ও হেড অব রিটেইল অ্যান্ড এসএমই ব্যাংকিংয়ে দায়িত্ব পালন করছেন এম খোরশেদ আনোয়ার। ইস্টার্ন ব্যাংকের এমএসএমই খাতে সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রডাক্ট অফারের মাধ্যমে এসএমই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার। ব্যাংকের এসএমই প্রডাক্টগুলো গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি এবং ঋণ ছাড় প্রক্রিয়া যথেষ্ট দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত। ৮০ শতাংশ ঋণই বন্ধকবিহীন হওয়ায় ডকুমেন্টেশন জটিলতাও অনেক কম। প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থপ্রবাহ মূল্যায়নপূর্বক সময়মতো ঋণ ছাড় করা হয় এবং জামানতবিহীন ঋণের পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। জামানতবিহীন ঋণপ্রাপ্তির সুবিধা গ্রহণ করে গ্রাহকরা তাদের ব্যবসায় ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা আমাদের গ্রাহক ভিত্তি ধরে রাখার চেষ্টা করি এবং ব্যাংকনির্ভর ব্যবসা সুবিধা সারা দেশে পৌঁছে দিই। ৮৫টি শাখা, ৩৬টি উপশাখা ও ১০৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে আমরা সারা বাংলাদেশের গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলের এসএমই উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি।

এসএমইগুলোকে অধিকতর সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলো যেসব অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে সঠিক সময়ে এসএমই ঋণ ছাড়করণ এবং গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থায়ন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ফসল তখনই সংগ্রহ করতে পারবেন, যদি তারা সময়মতো ঋণের অর্থ হাতে পান। অন্যথায় তাদের রিপেমেন্ট ও ব্যবসায়িক স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। আমরা গ্রাহকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার পর তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করি। এক্ষেত্রে আমরা বন্ধক ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব দিই না। আমরা যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবসার ধরন ও অর্থের চাহিদা নিরূপণ করার মাধ্যমে তাদের এসএমই প্রডাক্ট বাস্কেট সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করি। এসএমই গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আমরা সচেষ্ট এবং এজন্য তাদের জন্য বিভিন্ন প্রডাক্ট তৈরি করে চলেছি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে শুরু করে ফিক্সড এসেটের ক্ষেত্রেও আমরা অর্থায়ন করি।

এসএমইগুলোকে সহায়তার প্রচেষ্টা আরো বেগবান করতে সরকারের সমর্থন বিশেষভাবে প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি যে কুটির শিল্প, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো ট্যাক্স অব্যাহতি পেলে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়বে। অধিক রিফাইন্যান্স সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তহবিলসংক্রান্ত ব্যয়ও কমে আসবে। আমরা একই সঙ্গে মনে করি, এসএমই কর্তৃক উৎপাদিত পণ্যগুলো অধিক আকর্ষণীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের হওয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য ব্যবসা মালিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্যের বাহ্যিক রূপ ও স্থায়িত্ব বাড়ানো সম্ভব। সুতরাং আর্থিক সহায়তা ছাড়াও ব্যবসা মালিকদের টেকনিক্যাল, মার্কেটিং ও ম্যানেজারিয়াল সহায়তা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকার এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। 

এসএমই গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন বৈদেশিক মুদ্রার দুষ্প্রাপ্যতা এবং আমদানি এলসি খোলা, যার সঙ্গে রয়েছে গ্যাসস্বল্পতা। এসব কারণে ব্যবসা অনেকটা সংকুচিত হয়ে আসছে, যা সরকারি সহযোগিতা ছাড়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সরকার যদিও ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে কিন্তু সেখানে এসএমইগুলোর জন্য তেমন কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। এসএমই খাতের সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রতিষ্ঠা এবং ৭৪টি শিল্প এলাকা ছাড়া আর কোনো হাব গড়ে ওঠেনি। এসএমইগুলোর উন্নয়নে এক্ষেত্রে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে এ খাতের উন্নয়নে অর্থায়ন সুবিধাপ্রাপ্তিকে আরো সহজতর করা জরুরি।

এসএমই খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বেশকিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যেমন আন্তর্জাতিক মান ও বাজারযোগ্য পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা, সঠিক ব্যবসায়িক ডকুমেন্টেশন, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রকৃত লেনদেন সম্পর্ক, মার্কেটে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন, পণ্যের মানের নিশ্চয়তা ইত্যাদি। 

আমাদের দেশে ট্রেডিং ব্যবসা বর্তমানে যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও এসএমই সেক্টরের উন্নয়নে উৎপাদন ব্যবসা বিশেষ ভূমিকা পালনে সক্ষম। বাংলাদেশের এসএমই খাতের অন্যতম সম্পদ হলো ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা যারা বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল, অ্যাকসেসরিজ, সেমিফিনিশড ও ফিনিশড পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে। এসএমইগুলো নিজস্ব সক্ষমতা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক সহায়তা পেলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্প বিকশিত হবে এবং এসএমই খাতকে একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন