উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে

ছবি : বণিক বার্তা

এমরানুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা ব‍্যাংকের। যাত্রার শুরু থেকে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ঢাকা ব্যাংক করপোরেট খাতের পাশাপাশি এসএমই খাতেও গুরুত্ব দিয়ে আসছে। টেকসই ও উন্নয়ন কর্মসংস্থানবান্ধব দেশ গড়ে তুলতে এসএমই খাতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক

শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমএসএমই তথা মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ‍শিল্পের ভূমিকা ও অবদান আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হচ্ছে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ‍শিল্প। উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ‍শিল্প খাতের গড় অবদান ৫০ শতাংশের বেশি হলেও বাংলাদেশে জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে শিল্প খাতের মধ্যে এমএসএমই তথা মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ‍শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ। এ খাতে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এ খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পর্যাপ্ত দক্ষতার ঘাটতি এবং যথাযথ তথ্যের অভাবে এ খাতের উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মানসম্মত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া কেন্দ্রীয় তথ্য কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে উদ্যোক্তাদের জন্য বাজার গতিপ্রকৃতি, হালনাগাদ নীতিমালা, পণ্য রফতানির সুযোগ এবং ব্যবসায় উন্নয়নসংক্রান্ত তথ্য সহজলভ্য করা যেতে পারে।

ভবিষ্যতে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতিসহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো এবং দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতার মুখোমুখি হবেন। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও পরামর্শ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমরা নতুন কিছু পণ্য ও সেবা প্রদান করার মাধ্যমে ঋণদান প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা করছি। পাশাপাশি আমরা কিছু ডিজিটাল উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করার মাধ্যমে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

এরই মধ্যে আমাদের সব শাখায় গ্রাহকদের সহায়তার জন্য এসএমই হেল্প ডেস্ক ও নারী উদ্যোক্তা হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। ওই ডেস্ক থেকে সহজেই একজন সম্ভাব্য এসএমই উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন।

আমাদের দেশে এমএসএমই খাত পিছিয়ে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের অভাব। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের পর্যাপ্ত তথ্যের স্বল্পতার কারণে ওই উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা যায় না। এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনে ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।

এসএমই ব্যবসার প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে ট্রেড লাইসেন্স একটি অন্যতম সমস্যা। ট্রেড লাইসেন্সসহ ব্যবসা পরিচালনায় যাবতীয় কাগজপত্রগুলো যেন খুব সহজে এসএমই কাস্টমাররা পান সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

টিন, ভ্যাট, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ প্রাপ্তির অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করা এবং একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করলে এসএমই কাস্টমাররা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। সিজিএসের পরিধিকে আরো সম্প্রসারণ করলে এ খাতের আরো সাফল্য আসতে পারে। এসএমই খাতের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রি-ফাইন্যান্সিং স্কিম নেই। এ ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব খাতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রি-ফাইন্যান্সিং করা প্রয়োজন।

এসএমই উদ্যোক্তাদের সার্বিক উন্নয়নে এ খাতে একটি ডাটাবেজ একান্ত আবশ্যক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে কর ও শুল্ক হার কমানো যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন