সিএমএসএমই খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল প্রয়োজন

ছবি : বণিক বার্তা

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একেএম কামরুজ্জামান। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। পাশাপাশি তিনি একজন পেশাদার হিসাববিদও। সম্প্রতি দেশের এমএসএমই খাতের সার্বিক অবস্থা ও অর্থায়ন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশের সিএমএসএমই খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই?

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই খাতের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৭ শতাংশ। যদিও তা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় কম। করোনা মহামারীর ফলে এ খাতের উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ এ খাতকে বেগবান করতে সহায়তা করেছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের একটা বড় অংশ রয়েছে কর্মক্ষম জনসংখ্যা। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনবৈজ্ঞানিক মুনাফা নেয়ার একটা বড় সুযোগ কিন্তু আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা যদি এদের বড় একটা অংশকে উদ্যোক্তাতে রূপান্তর করতে পারি, তবে জিডিপিতে এ খাতের অবদান অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

দক্ষতার ঘাটতি এবং যথাযথ তথ্যের অভাবে এমএসএমই উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তথ্যের সুষ্ঠু প্রবাহ তৈরি করা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। সময়ের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম ও শহরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তথ্যের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বণ্টন একদিকে যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের পিছিয়ে রাখছে, অন্যদিকে বর্তমান সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রচেষ্টা কিন্তু ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষতার ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই উদ্যোক্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় লংকাবাংলা ফাইন্যান্স তার ২৭টি শাখার মধ্যে উদ্যোক্তাদের নিয়ে নিয়মিত ফাইনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম" বা "আর্থিক স্বাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। এছাড়া আমরা এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। তথ্যের সুষম বণ্টনের ওপর আমরা সবসময়ই গুরুত্ব আরোপ করে যাচ্ছি। আমাদের ২৭টি শাখার পাশাপাশি ৫১ জন মোবাইল ল্যান্ডিং অফিসারদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্থিক সেবা ও অর্থায়ন পরামর্শ পৌঁছে দিচ্ছি। এভাবে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে দক্ষতার ঘাটতি ও তথ্যের অসামঞ্জস্যতা দূর করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

ভবিষ্যতে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতিসহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো এবং দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতার মুখোমুখি হবেন। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের পরিকল্পনা কী?

এলডিসি-পরবর্তী সময়ে সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন। যে উদ্যোক্তারা রফতানির সঙ্গে জড়িত তারা রফতানির অংশ হারাবেন, উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে বর্তমানে যেসব অনুদান ও সহজ শর্তের ঋণ পাওয়া যেত সেগুলো আর পাওয়া যাবে না এবং বিশেষায়িত কিছু ফান্ড যেমন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড হয়তো আর পাওয়া যাবে না। এরই ফলে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক নীতিসহায়তা, দক্ষ মানবসম্পদ ও যথাযথ অবকাঠামো স্বল্পতা দেখা দেবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনটি মেয়াদে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি। স্বল্প মেয়াদে যে কাজটি করা উচিত তা হলো অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা এবং স্থানীয় কাঁচামালের ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা। এতে করে অর্থনীতিতে বর্তমানে বিদ্যমান পণ্যের চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এলডিসি-পরবর্তী সময়ে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হবে। যদি আমরা আমাদের স্থানীয় কাঁচামালের ব্যবহার বাড়াতে পারি তবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সহজে আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। এ বিষয়গুলো চিন্তা করে আমরা স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করছেন এমন ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন সহযোগিতা প্রদান করব। মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে প্রণীত নীতিমালা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করছি।

সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছেন উদ্যোক্তারা?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিএমএসএমই ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সেই ব্যবসার কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বড় একটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মাত্র শুরু হয়েছে, যা বিস্তার লাভ করতে কিছুটা সময় লেগে যাবে। তবে ব্যবসায়ের বেশির ভাগ বাহ্যিক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হলেও অভ্যন্তরীণ বা অপারেশনাল লেভেলে এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। যার ফলে সিএমএসএমই খাত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা পুরোপুরি পাচ্ছে না।

সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন?

সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একটি সিএমএসএমই ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দেশের সব সিএমএসএমই ব্যবসায়ের প্রোফাইল থাকবে। এতে করে দেশের সিএমএসএমইগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সহজ হতো। তাছাড়া এ খাতের উন্নয়নে আলাদা করে একটি দীর্ঘমেয়াদি পুনঃঅর্থায়ন বা প্রাকঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা এবং এর থেকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন