এমএসএমই খাতের জন্য গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে এনবিএফআই

ছবি : বণিক বার্তা

আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন রিজওয়ান দাউদ সামস। এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতিসহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদস্বল্পতার মতো প্রতিবন্ধকতাগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশের এমএসএমই খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই?

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে এমএসএমই (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) খাতের গুরুত্ব অপরিহার্য। কেবল এ খাত থেকেই আমাদের শিল্প খাতে ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ উদ্যোক্তা জড়িত আছে এ খাতে, যা আমাদের সমগ্র শ্রমশক্তির ২৫-৩০ শতাংশ। এছাড়া দেশের জিডিপিতে ২৫-২৭ শতাংশ অবদান রাখছে এমএসএমই খাত। এ খাত যেমন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, একই সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হচ্ছে।

অর্থায়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই বাধার মুখোমুখি হয় এসব প্রতিষ্ঠান। এখনো প্রায় ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অর্থায়ন ঘাটতিতে আছে এমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থায়ন সহজ না হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাকেই ব্যবসা সচল রাখতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষ জনশক্তির অভাবও একটি বড় সমস্যা। এছাড়া অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। নতুন বাজারে প্রবেশ করা এবং বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করাও এ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব সহজ নয়।

আমরা বিশ্বাস করি এমএসএমই খাতের জন্য গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। একটি দায়িত্বশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইপিডিসিও সে লক্ষ্যে অবিচল। কেবল ঋণ নয়, বিভিন্ন আর্থিক সেবা, যেমন ইকুইটি, মাইক্রো-ইন্স্যুরেন্স ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি প্রদানের মাধ্যমে আমরা এ ব্যবসাগুলোর উন্নয়নে পাশে থাকতে পারি। 

দক্ষতার ঘাটতি ও যথাযথ তথ্যের অভাবে এমএসএমই উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। দক্ষতা ও তথ্যের অভাব এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম প্রধান। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত প্রয়াসের প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের পরিকল্পনা কী?

এলডিসি স্ট্যাটাসের পর বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা অবশ্যই কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন। এক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন, যেমন সহজ ও দ্রুত ডকুমেন্টেশনে সহায়ক নীতির প্রয়োজন হতে পারে। এলডিসি স্ট্যাটাসের পর আইপিডিসি ফাইন্যান্সের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের অবকাঠামোয় পরিবর্তন আনতে পারে এবং উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনানুসারে কাস্টমাইজড আর্থিক সেবা দিতে পারে। এটি কেবল আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে কমিয়ে আনবে না, বরং পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে টিকে থাকার ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেবে। আমরা এরই মধ্যে কাস্টমাইজড আর্থিক সেবা নিয়ে বিপুল পরিমাণে কাজ শুরু করেছি এবং আরো এমন কিছু পরিষেবা দেয়ার পরিকল্পনা করছি।

এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করার দাবি জানিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি?

এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা সমাধানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের (ওএসএস) মতো সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন আছে। যদিও একটি সমন্বিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্লাটফর্ম সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি, তবুও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনার অগ্রগতি স্পষ্ট। যেমন আমাদের আইপিডিসি জয়ী ৩৬০ প্রোগ্রামটি আর্থিক সেবা ও পরামর্শসহ সুবিস্তর ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদান করে, যা উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। আইপিডিসি ফাইন্যান্স এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক দক্ষতা ও ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদান করে, যেমন ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া, অন্যান্য ডকুমেন্টেশন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি। অনুরূপভাবে, এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন উদ্যোক্তা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ এলাকায় একাধিক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা চালু করেছে। তবে এক্ষেত্রে আরো উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। একটি সমন্বিত ওএসএস প্লাটফর্ম এমএসএমইগুলোর জন্য আরো সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

এমএসএমই খাতের ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছেন উদ্যোক্তারা?

এমএসএমই খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে। অনলাইন প্লাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ডেটা অ্যানালিটিকস টুলস ব্যবসা পরিচালনা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এক্ষেত্রে যেমন সুবিধাও আছে তেমন কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, পর্যাপ্ত অর্থায়ন না থাকা এবং ইন্টারনেট সংযোগের অভাব বা দুর্বলতা অনেক উদ্যোক্তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আইপিডিসির অভ্যন্তরীণ টিমের তৈরি ‘আইপিডিসি সিঁড়ি’ নামক প্লাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা খুব সহজেই ব্যবসায়িক তথ্যের আপডেট জানতে পারেন। 

এমএসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন?

এমএসএমই খাতের উন্নয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারের সহযোগিতাপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সরকার কয়েক স্তরের পদক্ষেপ রাখতে পারে। বিশেষত, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নীতি শিথিলকরণ, ছোট পরিসরের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সরকারিভাবে সব প্রতিষ্ঠানের ওপর এমএসএমই খাতের উন্নয়নে কাজ করার নীতিমালা প্রয়োগ সার্বিকভাবে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। প্রতিনিয়ত বড় হতে থাকা আমাদের এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ‘‌আইপিডিসি ডানা’র মাধ্যমে আমরা দেশজুড়ে ক্ষুদ্র ঋণ সেবা দিলেও অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই ডকুমেন্টেশনের জটিলতার কারণে এ সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে নীতিমালার কিছুটা পরিবর্তন আমাদের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করবে উদ্যোক্তার ব্যবসা বৃদ্ধিতে আরো বেশি ভূমিকা রাখার জন্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন