আইএমএফের সতর্কবার্তা

অর্থনীতির রূপান্তরকে ‘‌যন্ত্রণাদায়ক’ করে তুলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বণিক বার্তা ডেস্ক

এআইয়ের ব্যবহারে বিভিন্ন খাতে ছাঁটাই বাড়তে পারে ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তি থেকে কারখানা ও শিক্ষা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিন দিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে জেনারেটিভ এআইয়ে বিনিয়োগকে কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে অনেক কোম্পানি। ফলে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি মানুষের স্থান কতটা দখল করে নেবে তা নিয়ে কৌতূহল ও শঙ্কা কম নয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। সংস্থাটির মতে, এআই বড় সংখ্যক মানুষকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজের বাইরে ঠেলে দেবে, যা বিশ্ব অর্থনীতির রূপান্তরকে ‘‌যন্ত্রণাদায়ক’ করে তুলতে পারে। খবর দ্য হিল ও দ্য গার্ডিয়ান।

আইএমএফ বলছে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও পরিষেবা খাত উন্নতকরণে নতুন জেনার-এআইয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রযুক্তিগত রূপান্তরের আরেকটি দিক হলো এর জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মী চাকরি হারাবেন। পাশাপাশি বড় পরিসরে বৈষম্যও তৈরি হবে। এজন্য কর ব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করতে হবে।

চলতি সপ্তাহেই সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দেশগুলোকে সামাজিক সুরক্ষা জাল শক্তিশালী করা উচিত ও কর্মক্ষেত্রে রূপান্তরের সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করে আইএমএফ।

সংস্থাটি বলছে, এআই ব্যবহারে প্রাপ্ত সুযোগগুলো পর্যাপ্তভাবে বণ্টন করতে হবে। এতে শুধু দুর্বলদের রক্ষা ও সামাজিক সংহতি নিশ্চিত হবে না, বরং জেনার-এআই উপস্থাপিত সুযোগগুলো সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হবে।

নতুন ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মীদের পরিবর্তিত পরিবেশ ও চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। এজন্য বেকারত্বের সময় তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে।

আইএমএফের পরামর্শের মধ্যে আরো বলা হয়েছে, দেশগুলোকে করপোরেট ট্যাক্স প্রণোদনা বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কেননা জেনার-এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ছাঁটাইয়ের প্রতি উৎসাহিত করে। যার কারণে বৈষম্য বাড়তে করছে। ক্রমবর্ধমান এ বৈষম্য কমাতে মূলধনি আয়ের ওপর কর বৃদ্ধি ও এআই সার্ভার থেকে কার্বন নিঃসরণের ওপর করারোপ করা যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি টুল ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এর পর থেকে গুগল ও মেটার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিজস্ব এআই মডেলের ওপর জোর দিয়েছে।

গত এপ্রিলে ব্রিটিশ বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউগভ দুটি জরিপ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন কর্মী এআই নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, এআই তাদের কর্মঘণ্টা বা বেতন কমিয়ে দেবে; এমনকি চাকরিও হারাতে পারেন তারা। ৩৬ শতাংশ বলেছেন, এআই তাদের অবস্থান নিয়ে নেবে ভেবে তারা শঙ্কিত। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মনে করেন প্রযুক্তি পুরো শিল্পে কর্মসংস্থান কমিয়ে দেবে।

আইএমএফ বলেছে, এআই সৃষ্ট অর্থনৈতিক অভিঘাত প্রশমিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের উচিত সুনির্দিষ্ট আর্থিক নীতি গ্রহণ করা। নীতিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা ও কার্বন নিঃসরণের ওপর করারোপ অন্যতম।

আরো বলা হচ্ছে, এআই সিস্টেম পরিচালনায় ব্যবহৃত কম্পিউটার সার্ভার পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চাকরির ওপর এআইয়ের প্রভাব প্রশমনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সামনে আনা যায়। তাই এসব সার্ভারের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত প্রভাবের জন্য কার্বন শুল্ক প্রয়োগ করা উচিত।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দেড় শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য ডাটা সেন্টার, সার্ভার ও ডাটা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কগুলো দায়ী। যদিও এআই বর্তমানে ডাটাসেন্টারগুলোয় অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে বিদ্যুৎ তাদের শক্তির প্রধান উৎসও হয়ে উঠতে পারে এবং সামগ্রিক বিদ্যুতের ব্যবহার আরো বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরো সতর্ক করা হয়েছে, জাতীয় আয়ের অনুপাতে মজুরির হার ক্রমেই কমছে। এআইয়ের প্রভাবে তা আরো কমতে পারে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাদের অতিরিক্ত আয় বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরো ব্যাপক করে তুলবে।

তবে আইএমএফ সরাসরি এআই বিনিয়োগে করারোপের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে। সরাসরি করারোপের পরিবর্তে এটি করপোরেট ট্যাক্স ও সুদ, লভ্যাংশ ও মূলধনি আয়ের ওপর কর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া ব্যতিক্রমী উচ্চ মুনাফার ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্সের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছে। 

আইএমএফ আরো বলছে, কোম্পানিগুলো প্রায়ই কম করের সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে মুনাফা স্থানান্তর করায় করপোরেট ট্যাক্স এ মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। তাই আরো কার্যকর করারোপের লক্ষ্য নিতে হবে।

গবেষণা অনুযায়ী, এআই প্রাথমিকভাবে আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ শিল্পে প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনার মতো হোয়াইট কলার চাকরিকে প্রভাবিত করবে। ধীরে ধীরে এটি উৎপাদন বা বাণিজ্যসম্পর্কিত ব্লু কলার চাকরিতে আঘাত হানতে পারে। আইএমএফের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত অর্থনীতিতে প্রায় ৬০ শতাংশ চাকরি এআই ব্যবহারের কাছাকাছি এসেছে। এসব চাকরির অর্ধেক নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন