আন্তর্জাতিক কর চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০২১ সালে এক সম্মেলনে গ্লোবাল ট্যাক্সের বিষয়ে একমত হন জি৭ নেতারা ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক কর ব্যবস্থাকে সমন্বিত করতে কয়েক বছর ধরে একটি চুক্তির চেষ্টা করছে বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনসভার সমর্থন পেলে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু এ-সংক্রান্ত বিল পাসে মার্কিন সিনেটে বিভক্তির কারণে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় বিশ্বজুড়ে কর জটিলতা তৈরির শঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ব্যাহত হতে পারে বৈশ্বিক বাণিজ্যও। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

আন্তর্জাতিক কর চুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আলোচনা ৩০ জুন নাগাদ শেষ হতে যাচ্ছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এতে মধ্যস্থতা করছে। এর মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত চুক্তিটি স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন শুরু হতে পারে। চুক্তিটি কার্যকর হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দেয়া কর থেকে আসা প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের বার্ষিক মুনাফা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে। বর্তমানে টেক কোম্পানিগুলো মূল দেশ, নাকি যেসব দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেসব দেশে কর দেবে তা নিয়ে জটিলতা আছে। এ আলোচনার মাধ্যমে এ জটিলতারও সমাধান হওয়ার কথা। 

তবে অনুসমর্থন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে কানাডাসহ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে বড় টেক কোম্পানিগুলোর জন্য নিজস্ব করনীতি চালু করেছে। দেশগুলোর এমন পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সমন্বিত করনীতির বিপরীত। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুসমর্থন ছাড়া চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে দেশটির আইনপ্রণেতাদের মতদ্বৈধতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন সিনেটে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হতে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রয়োজন। কিন্তু রিপাবলিকানদের তীব্র বিরোধিতার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তি জানান, এতে চুক্তিটি নিয়ে মারাত্মক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ওইসিডি ট্যাক্স কমিটির চেয়ার অব বিজনেস অ্যালান ম্যাকলিন বলেন, ‘‌যুক্তরাষ্ট্র অনুসমর্থন না করলে চুক্তিটি একটি অর্থহীন প্রয়াসে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কর ব্যবস্থাকে সমন্বিত করার প্রচেষ্টাকে সফলতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর কোনোটিই সফল হবে না।’

২০২১ সালে চুক্তির বিষয়ে আলোচনার শুরু হয়। তখন ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স (ডিএসটি) বা ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর থেকে কর নেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে একটি সমঝোতা হয়েছিল। চলতি মাসে সমঝোতার মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে কার্যকর না হওয়ায় নতুন করে আরো জটিলতা তৈরির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ওইসিডি গতকাল থেকে অনুস্বাক্ষরের জন্য চুক্তিটি উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে।

চুক্তিটি কার্যকর হতে এর আওতায় আসা প্রায় ১০০টি কোম্পানির ৬০ শতাংশের প্রধান কার্যালয় রয়েছে, এমন অন্তত ৩০টি দেশের আইনসভার সমর্থন প্রয়োজন। আর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া কোনোভাবেই এ শর্ত পূরণ সম্ভব নয়।

পিডব্লিউসি এর গ্লোবাল ট্যাক্স লিডার উইল মরিস বলেন, ‘চুক্তিটি যে ধরনের প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, তা পূরণ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য লজ্জার।’

এদিকে চুক্তিটি কার্যকরে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায় দেশগুলো আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি করদাতা কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়বার আবারো করারোপ করতে পারে, এমন আশঙ্কা সত্ত্বেও দেশগুলো নিজস্ব করনীতি বাস্তবায়নে মনোযোগী হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক কর জটিলতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন কর ব্যবস্থা সংস্কারে ওইসিডির উদ্যোগের প্রশংসা করেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি নিশ্চিত করেন, ভিন্ন দেশে বড় কোম্পানিগুলোর পণ্য বা পরিষেবা বিনিময়ের মূল্য নির্ধারণের নিয়ম (ট্রান্সফার প্রাইসিং) সহজ করার পাকাপোক্ত আশ্বাস দেয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র কখনই চুক্তিটি স্বাক্ষর করবে না।

একজন মধ্যস্থতাকারী জানিয়েছেন, এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে নিজস্ব ডিএসটি প্রণয়নের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। তাদের লক্ষ্য, দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম আছে, এমন বড় কোম্পানিগুলোর ওপর করারোপ করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের হয়। গত সপ্তাহে কানাডার আইনসভায় এ ধরনের কর আইন পাস হয়েছে। কেনিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও আইন পাসের প্রক্রিয়া চলমান। টেকনোলজি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইনফরমেশন টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিলের মেগান ফঙ্কহসার জানান, তাদের নির্বাহীরা বিশ্বব্যাপী স্বতন্ত্র ডিএসটি করনীতি বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। প্রসঙ্গত, ১৪ জুন শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-সেভেনের নেতারা এ মাসের মধ্যে ওইসিডির চুক্তির কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন