গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

অবকাঠামো সংকট ও অপ্রতুল অর্থায়ন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বেসিস

দেশের গ্রামীণ জনপদে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো সংকট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ইন্টারনেটের সংযোগ স্বল্পতা তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে বড় বাধা হয়ে আছে। এ খাতের স্টার্টআপ ও এসএমইগুলো (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান) অপ্রতুল অর্থায়নের কারণে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারছে না। উচ্চ করের বোঝা, প্রণোদনা সংকট, উচ্চ ব্যয় নির্বাহ, সরকারের নীতি সহায়তার অপ্রতুলতা, ডিজিটাল লিটারেসির অভাব এ খাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর বেসিস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আইসিটির গুরুত্ব’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসিস ও পিআরআই।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী ২০৩১ সাল অথবা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া পর্যন্ত সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতে কর অব্যাহতি চলমান রাখা উচিত। স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়ন করতে হলে ২০৩১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ন্যূনতম ২ থেকে ৫ শতাংশ কর বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর বৈশ্বিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এ খাতের ২০ শতাংশ এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৪ শতাংশ প্রণোদনা বরাদ্দ করা উচিত।  

তিনি বলেন, আইসিটি খাতকে এগিয়ে নিতে হলে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ বিনিয়োগ হয়তো বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইসিটি খাতকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড করা উচিত। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বাজেটের মাধ্যমে এ খাতকে এগিয়ে নিতে পারে।

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নিয়ে যেতে হবে। আমরা সব মার্কেটেই আছি, আমাদের বাজারের আকার যে ছোট এমন কিন্তু নয়। আমাদের পোর্টফোলিও ছোট। দেশে আমাদের পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা থাকতে হবে। আমাদের আড়াই হাজার কোম্পানি আছে, প্রতিবছর ২০০ কোম্পানি এখানে নতুন করে আসছে।

সভাপতির বক্তব্যে বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, প্রযুক্তি খাতের বড় কাঁচামাল দক্ষ মানবসম্পদ। আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর ধার্য করা আছে। এ খাতকে কর অব্যাহতি দেয়া হলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠত এবং আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারতাম। এনবিআরের সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য যখন ভিয়েতনামের কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় তখনো আমাদের সক্ষমতা ছিল, এখনো আমাদের সক্ষমতা আছে। ভ্যাট অটোমেশন আমরা করতে পারি, কীভাবে একটি পণ্যকে ট্র্যাক করা সম্ভব সে কথাও আমরা এনবিআরকে বলেছি। এসএমইর জন্য ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর হলে এবং বড় করপোরেটদের জন্য একই হারে কর হলে এসএমইগুলো দাঁড়াবে কী করে। তাদের কর কমিয়ে দিন, কর দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অভ্যস্ত করান। তাহলে কর আদায় বৃদ্ধি হবে।

গার্মেন্টস, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই আইসিটি অন্তর্ভুক্ত উল্লেখ করে বেসিস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ বলেন, আমাদের দেশীয় কোম্পানির সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বেসিসের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ খাত সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন