ক্যানভাসে গ্রীষ্মের যত রঙ

ফারিহা আজমিন

লিরিক অব সামার-২ শিল্পী: আশফাক বাপ্পী, ন্যাচার-১ শিল্পী: তানভীর আহমেদ খান

বৈশাখের গরম, তপ্ত রোদের শুরু মানেই গ্রীষ্মের আগমন। হঠাৎ ভরদুপুরে আকাশ কালো করে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া অথবা চারদিকে আমের মুকুলের ঘ্রাণ। তবে ল্যান্ডস্কেপ বেজ পেইন্টারদের কাছে প্রতিটি ঋতুই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আর বিচিত্র সব অনুভূতি। নভেরার এবারের আমাদের আয়োজন গ্রীষ্মকালকে ঘিরে শিল্পীদের আঁকা বেশকিছু ছবি নিয়ে। 

আশফাক বাপ্পী

তরুণ শিল্পী আশফাক বাপ্পী। চেষ্টা করেন প্রকৃতির বিভিন্ন সময়ের রূপ-রস অনুভব করে সেগুলো নিয়ে কাজ করার। অ্যাবস্ট্রাক্ট, সেমি-অ্যাবস্ট্রাক্ট, রিয়েলিস্টিক বিভিন্নভাবে সেগুলো ক্যানভাসে রাঙিয়ে তোলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, ‘আমি নিয়মিত জলরঙ অনুশীলন করি, সেজন্য যেখানেই অবস্থান করি না কেন প্রতিটি ঋতুকেই খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, এটা আমার অভ্যাস। গ্রীষ্মকালকে আমি বিভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করি। সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি প্রকৃতিতে যে তুখোড় উন্মাদনা সৃষ্টি করে তার কাছাকাছি থেকে প্র্যাকটিস না করলে তখনকার সেই আবেদন, সেই অনুভূতি কখনই পেইন্টিংয়ে নিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।’

গ্রীষ্মের সকাল, সূর্যমুখী, তপ্ত দুপুর, ঝলসে যাওয়া হলুদ ঝিঙে ফুল, কৃষ্ণচূড়ার লাল, সোনালুর হলুদ ফুল, এগুলোর পাশাপাশি আরো নানা বিষয় নিয়ে এ গ্রীষ্মে ছবি একেঁছেন আশফাক বাপ্পী। 

শিল্পীকে প্রশ্ন করেছিলাম গ্রীষ্মকাল কীভাবে কাটছে, ‘যদি খুব ছোট করি বলি, চারদিকে মৌসুমি ফলের গন্ধ, সবুজের বুক চিরে লাল-হলুদ ফুলের সমারোহ। ভ্রমর, মৌমাছির পিছু পিছু মিষ্টি গন্ধের খোঁজে উড়ে বেড়াই আর ছবি আঁকি জলরঙে। এভাবেই গ্রীষ্মকালের বিভিন্ন সময়কে ফ্রেমবন্দি করে তুলে রাখছি সেসব অনুভূতি, অভিজ্ঞতার গল্পগুলোকে।’

তানভীর আহমেদ খান 

জন্মেছেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শৈশবও কেটেছে সেখানেই। গ্রীষ্ম বলতে দুপুরের রোদ্দুর শেষে বিকালকেই বেশি ভালোবাসেন তিনি। এঁকেছেন গ্রীষ্মের বিকালের নানা ছবি। শিল্পী বলেন, ‘ছবি আঁকার ইচ্ছে আমার ক্লাস নাইন থেকেই। তবে আঁকাআঁকির শুরু থেকে এ অবধি প্রায় সব রকমের ছবিই আমি এঁকেছি। বলা যায় সব ঋতুকে ভেবেই ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে। যদি শুধু গ্রীষ্মকে নিয়ে বলি, আমার আঁকা খুব পছন্দের কাজ হলো আমাদের ধানমন্ডি লেকে বসে আঁকা কয়েকটি ছবি। লেকের রাস্তাটা বিশাল বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছে ছেয়ে থাকে। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকালের কৃষ্ণচূড়া আমার ভীষণ পছন্দের।’

শাকিরুন নাহার কানন 

‘আমি বড় হয়েছি রংপুরে। আমার ছবি আঁকার সঙ্গে সম্পৃক্ততাও ছোটবেলা থেকেই। রংতুলি আমি ভীষণ ভালোবাসি। তবে ঋতু হিসেবে কেবল গ্রীষ্মকে নিয়ে আলাদা করে বলতে পারব না। কারণ আমার সব ঋতুই ভালো লাগে,’ বলেন শিল্পী শাকিরুন নাহার কানন।

প্রতিটি ঋতুতেই নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে ষড়ঋতুর এ দেশে বসন্তের মৃদু বাতাস, শীতের আলাদা আমেজ, বর্ষার রূপ আরো সুন্দর বলেই তিনি মনে করেন। তবে শিল্পীর প্রায় সব ঋতু নিয়ে ছবি থাকলেও গ্রীষ্মের কালবৈশাখী বা ঝড়ের ছবিই যেন তিনি বেশি এঁকেছেন। শিল্পী বলেন, ‘গ্রীষ্মের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো, হঠাৎ যখন বৃষ্টি নামে সবার কাজের গতি পরিবর্তন ঘটে। এ দৃশ্যটি ভালো লাগে।’ 

ফাহিম চৌধুরী

ছবি আঁকেন একটু ভিন্নভাবে। আমাদের দেশটা যেমন নানাভাবে অগোছালো তবে সুন্দর। একেবারে পরিপাটি নয় তবে আমাদের খুব কাছের। তেমন ভাবনা থেকেই শিল্পী ফাহিম চৌধুরী ছবি আঁকেন কিছুটা ঝাপসাভাবে, কিছুটা এলোমেলো। একেবারে সাজানো-গোছানো, পরিপাটি ছবি তিনি আঁকেন না। গ্রীষ্ম নিয়ে আছে তার বেশ কয়েক ধরনের ছবি। প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে গেছে নদী বা মাঠজুড়ে খাঁ খাঁ রৌদ্র পড়েছে, গ্রীষ্মের এমন সব রূপই তুলে ধরেছেন ক্যানভাসে। শিল্পী বলেন, ‘গ্রীষ্মের নানা রঙ। গ্রীষ্মকে বলা যায় সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ঋতু। এই মাঠজুড়ে রোদ, এই নামছে ঝড়। আবার গ্রীষ্মের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো প্রকৃতির নানা রঙ। ক্যানভাসে শত শত রঙ নিয়ে খেলা যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন