শিল্পী জীবনের নানা গল্প ও অভিজ্ঞতার ‘আন্তঃ প্রসঙ্গত’

ফারিহা আজমিন

ছবি: কলা কেন্দ্র

লালমাটিয়ার কলা কেন্দ্র দ্বীপ গ্যালারিতে ছয় শিল্পীরআন্তঃপ্রসঙ্গতশিরোনামের যৌথ একটি প্রদর্শনী চলছে। শিল্পীজীবনের নানা গল্প অভিজ্ঞতার ছাপই রয়েছে সেখানের প্রতিটি কাজে। প্রদর্শনীর কাজগুলোকে আরো স্বতঃস্ফূর্তভাবে তুলে ধরতেই কিউরেটর শর্মিলী রহমানের আয়োজন দুটো গ্যালারিতে ভিন্ন নকশায় উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো আয়োজন নিয়েই তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে।

শিল্পীদের প্রত্যেকের অনুপ্রেরণার উৎস স্বকীয় হলেও কোথাও না কোথাও তাদের ভাবনাগুলো এক এবং এক জায়গায় এসেই মেলে। আন্তঃপ্রসঙ্গত শব্দের মানেই হলো অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় তুলে ধরা। সে জায়গা থেকেই ছয়জন শিল্পী তাদের নানা কাজ ড্রয়িং, ভাস্কর্য, installation মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন নিজেদের ভাবনাগুলো।


কিউরেটর শর্মিলী বলেন, ‘আয়োজনের সঙ্গে থাকা প্রত্যেক শিল্পীই তাদের সহজ গ্রামীণ জীবন থেকে শহুরে জীবনের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। শিল্পীরা প্রত্যেকেই কাজের মধ্য দিয়ে শিকড়ের কাছে ফিরতে চেয়েছেন। পাশাপাশি নাগরিক সমাজে শিল্পী হিসেবে নিজের অবস্থান কী, তা জানার প্রয়াস রয়েছে সবার কাজের মধ্য দিয়ে। সব মিলিয়ে যৌথ প্রদর্শনীর মূল ভাবার্থ হলো স্বরূপের খোঁজ।ছয়জন শিল্পীর মধ্যে শিল্পী কুন্তল বাড়ৈয়ের কাজে স্মৃতিকাতর হয়ে শহুরে বিভ্রান্তিময় জীবনের পর মাটির কাছাকাছি থাকতে চাওয়ার যে বাসনা তাই দেখতে পাবে দর্শক। তার কাজগুলোয় রয়েছে সে ভাবনারই ছাপ। সেই সঙ্গে শিল্পী , এছেন তার কাজ নিয়ে বলেন, ‘একটি শিশু ছোটবেলা থেকেই তার চারপাশের সবকিছুকে অবজারভ করতে শুরু করে এবং তার বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সেসব বিষয়ের ছাপই দেখা যায়। সে জায়গা থেকেই আমার একটি ইনস্ট্রলেশন রয়েছে কলা কেন্দ্রের প্রদর্শনীতে সাইলেন্ট কিড ইজ ওয়াচিং ইউশিরোনামে। আবার মানুষ তার চিন্তাশক্তি দিয়ে অনেক ভাবনাকে এগিয়ে নিতে পারে। আমরা চাইলে আমাদের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যৎকে নিয়েও কাজ করতে পারি। আমার ভাবনা, আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা থেকেই জন্মেছে। তাই আমি যেমন অতীতের নানা বিষয় মনে রেখে বর্তমানকে গুছিয়ে চলতে পারি, সেই আমিই আবার আমার ভবিষ্যৎ ভাবনায় এগিয়ে যেতে পারি। সে ভাবনা অভিজ্ঞতা থেকেই আমার একটি চিত্রকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। যেখানে আমি এমন তিনটি চিত্র পাশাপাশি রেখেছি একটি অতীত, একটি বর্তমান এবং অন্যটি ভবিষ্যৎ নামে।’  

এছাড়া অপু রাজবংশী তার তৈরি ভাস্কর্যে সমুদ্র পানির সঙ্গে প্রেমময় বন্ধনের রূপই তুলে ধরেছেন। তিনি পূর্বপুরুষের নদী, মাছ, মাঝির সঙ্গে সম্পর্ক cement, wood, metal হাইব্রিড ফর্মের ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। শিল্পী সুমন বর্মণের কাজে দেখা গেছে আমাদের জীবনের নানা পরিবর্তনকে তিনি পানির গতিময়তায় তুলে ধরেছেন কাঠ খোদাই মাধ্যমে।

শিল্পী ফারহানা ফেরদৌসীযার কাজ পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থানকেই জানান দেয়। তিনি দীর্ঘ সেলাইয়ের ফোঁড় দিয়ে তৈরি করেছেন বেশকিছু চিত্রকর্ম, যেখানে সাদা কাপড়ে লাল সুতোর বুননে প্রকাশ পেয়েছে তার ক্ষোভের ভাষা।

শিল্পী খন্দকার নাসির আহম্মদের শিল্পকর্ম নিয়ে বলতে গিয়ে কিউরেটর শর্মিলী বলেন, ‘নাসিরের অনেকগুলো কাজ দ্বীপ গ্যালারিতেও আছে। তিনি আয়নায় আত্মপ্রতিকৃতির মাঝে কখনো গ্লানি কখনো অপরের সঙ্গে একাত্মতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কাগজে লোকজ কারু, এমন কিছু টেরাকোটার কাজ উপস্থাপন করেছেন যা এক গুঢ় সত্যের সন্ধ্যানে লিপ্ত।

এছাড়া শিল্পীদের আরো কিছু কাজ রয়েছে, যে কাজের গল্পগুলো বেশ ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের ভাবনার জায়গা এক। সেই সঙ্গে প্রদর্শনী নিয়ে কিউরেট শর্মিলীর তার আরো একটি ভাবনা যুক্ত করেছেন, যে ভাবনা প্রত্যেক শিল্প শিল্পীর জন্য প্রয়োজন।একজন শিল্পী তার শিল্পকর্মগুলো কেবল প্রদর্শন করল এবং দর্শক এসে তা দেখে বাড়ি ফিরে গেল, এটিই একটি প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হতে পারে না। এটি আমাদের আয়োজনেরও উদ্দেশ্য নয়। দর্শকের কাছে যদি তার পছন্দের কাজটি -নাই থাকে তবে শিল্প তার দুত্যি ছড়াবে কেমন করে এবং শিল্পীই বা তার কাজের মধ্য দিয়ে উপকৃত হবে কীভাবে!—বলেছেন তিনি।

এমন সব ভাবনা নিয়েই চলছে কলা কেন্দ্র দ্বীপ গ্যালারির এবারের আয়োজন, যা শুরু হয়েছে ১৭ মে এবং চলবে আগামী ২জুন পর্যন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন