মিশেল বাস্কিয়ার চিত্রকর্ম বিক্রি হলো ১৪৮ কোটি টাকায়

সাফকাত সায়েম

ছবি: আর্ট নিউজ

চিত্রকর্মের নাম ‘ন্যাটিভ ক্যারিয়িং সাম গানস, বাইবেলস, অ্যামোরাইটস অন সাফারি’। এঁকেছিলেন ফরাসি চিত্রকর জ্যাঁ মিশেল বাস্কিয়া। ১৯৮২ সালে আঁকা চিত্রকর্মটি হংকংয়ের ফিলিপস মডার্ন অ্যান্ড কনটেমপোরারি আর্ট গ্যালারি থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলারে বিক্রি হলো। এর মধ্য দিয়ে চলতি মৌসুমে হংকংয়ে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মের তালিকায় মূল্যের দিক থেকে শীর্ষে উঠে এল বাস্কিয়ার কাজ। শিল্পকর্ম বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ফিলিপসও স্থাপন করল নতুন উদাহরণ। এর আগে বাস্কিয়ারই আঁকা আরেকটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলারে। সেদিকে ইঙ্গিত করে ফিলিপসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেইলিং লি বলেন, ‘এ বিক্রির মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে বাস্কিয়ার চিত্রকর্মের প্রতি এখনো আমাদের ভালোবাসা অটুট।’

বাস্কিয়ার এ চিত্রকর্মের প্রধান দুটি বিষয়বস্তু সাম্রাজ্য আর দাসত্ব। প্রথম দেখাতেই দর্শক স্পষ্টভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন উপনিবেশ যুগের আমেরিকা। শিল্পী এখানে স্থানীয়কে এঁকেছেন কালো রূপ দিয়ে। পাশেই এঁকেছেন ঔপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ চরিত্র, যার মাথায় টুপি ও হাতে বন্দুক। যেন উপনিবেশবাদ ও দাসত্বের মধ্যকার পৃথক দুনিয়াকে পাশাপাশি হাজির করতে চেয়েছেন বাস্কিয়া। বাস্কিয়ার সময় ঔপনিবেশিক আচরণের সমালোচনা চলছিল। পেইন্টিংটি তারই গুরুত্বপূর্ণ এক দলিল। বাস্কিয়া সাধারণত শ্বেতাঙ্গদের পেইন্টিংয়ে আনতেন না। দু-একবার এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের দেখা যেত নেতিবাচক চরিত্রে। সেটা তার সময়ের বাস্তব দৃশ্য। বর্তমান চিত্রকর্মটি ছাড়াও গত বছরের শেষ দিকে বাস্কিয়ার তিনটি কাজ বিক্রি করে ফিলিপস। ১৯৮১ সালে আঁকা পোর্ট্রেট অব আ ফ্যামাস বলপ্লেয়ার শিরোনামের চিত্রকর্মটির দাম ছিল ৭৮ লাখ ডলার। 

১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাঁ মিশেল বাস্কিয়া। বেশি দিন বাঁচেননি তিনি। মাত্র ২৮ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে মারা যান। তার বড় হওয়া নিচু পরিবার থেকে। অতিক্রম করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। এদিকে ছবি আঁকার সময়ও পেয়েছেন খুব কম। ১৯৮২ সালে যখন তার প্রথম ছবির প্রদর্শনী হয়, তারপর হাতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র ছয় বছর। এ ছয় বছরে তিনি আমেরিকার মতো একটি দেশের আইকনে পরিণত হয়েছেন। তার ছবি, ছবির বিষয় পরিকল্পনা ও দর্শন শিল্পপ্রেমিকদের নজর টেনেছিল। চলে যাওয়ার আগে দারুণ কিছু চিত্রকর্ম রেখে গেছেন তিনি। সেই চিত্রকর্মের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত লা হারা, বয় অ্যান্ড ডগ ইন আ জনিপাম্প ও কিং আলফানসো। প্রতিটি সৃষ্টিকর্মই নিজের দিক থেকে অনন্য। 

বাস্কিয়ার জীবন পার হয়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। সেই প্রতিকূলতা ও ক্ষতবিক্ষত অন্তরকে তিনি হাজির করেছেন ক্যানভাসে। সৃষ্টিকর্মে তার শেকড় খুঁজে ফেরার তাড়নাও দেখা যায়। সাংস্কৃতিক শেকড় হিসেবে তিনি যে বিষয়গুলোকে শনাক্ত করে গেছেন, তার মধ্য দিয়ে আজও আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের যেতে হয়। সেজন্যই বাস্কিয়া কেবল তার সময়ের প্রতিনিধি নন। তিনি স্বীয় সময়কে অতিক্রম করে সাংস্কৃতিক শেকড় সন্ধানের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছেন। বাস্কিয়া যে কথাগুলো রূপকের আশ্রয়ে বলে গেছেন, বর্তমানে তা ব্যাখ্যা ও নতুন করে পাঠ করার প্রবণতা জনপ্রিয় হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন