বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘উপদেষ্টা পরিষদ’। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাসহ বিআরটিএর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতি, সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রণয়ন এ পরিষদের প্রধান কাজ। তার জন্য প্রতি চার মাসে একবার সভা করার কথা। যদিও গতকাল এ পরিষদের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘ ছয় বছর পর। এর আগে সর্বশেষ সভাটি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট।
দীর্ঘদিন ধরে উপদেষ্টা পরিষদের সভা না হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ছিল গতকালের সভার কার্যপত্রেও। এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভা আয়োজনের প্রচেষ্টা থাকলেও কভিড-১৯ মহামারী, তিনজন প্রতিনিধি মনোনয়ন এবং নানাবিধ কারণে তা করা সম্ভব হয়নি।
রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত সভা শেষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পরিষদের সভাপতি, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিআরটিএ আইন-২০১৭ অনুযায়ী চার মাসে একবার সভা হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মহামারী এবং মেজর একটা অপারেশন আমার হয়েছে, সেটা আপনারা জানেন। এসব কারণে কিছু কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। উপদেষ্টা পরিষদের আগে আমরা কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সভা করেছি। এসব সভা নিয়মিতভাবে হলে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। সমাধানের পথ খুঁজতে পারি।’
এদিকে দীর্ঘ সময় পর সভা হলেও পুরনো সিদ্ধান্তই সামনে এসেছে নতুন করে। গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সারা দেশে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ নীতি কার্যকর করা হবে। সড়কে চলাচলরত ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ (ধ্বংস) করা হবে। আর ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দেয়া হবে না। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত মোটরযান ছাড়া অন্য কোনো গাড়িতে হুটার (হুইসেল) ব্যবহার করা যাবে না।
অথচ সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের গ্রহণ করা এ সিদ্ধান্তগুলোর সিংহভাগই দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা নিষিদ্ধ, চালকের হেলমেট ছাড়া তেল বিক্রি বন্ধ, উচ্চ স্বরে হর্ন বাজানো বন্ধের মতো বিষয়গুলোয় এর আগেও বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত এসেছে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে।
সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকায় কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো যাবে না। এটা আগে কার্যকর করুন। এছাড়া ২২ মহাসড়কে রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করুন। ঢাকা সিটিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা যাতে না চলে, সে বিষয়ে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, এগুলো চলতে যাতে না পারে, সেটার ব্যবস্থা করুন।’
দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘ঢাকা সিটিতে মোটরসাইকেল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন। এখন মোটামুটি সবাই হেলমেট পরেন। কিন্তু ঢাকার বাইরেও একটা নীতি গ্রহণ দরকার। নো হেলমেট, নো ফুয়েল। সারা দেশে মোটরসাইকেলের চালকসহ দুজনের বেশি বহন করা যাবে না। আর প্রত্যেকেরই হেলমেট থাকতে হবে। নয়তো জ্বালানি বিক্রি করা যাবে না।’
সারা দেশে মোটরসাইকেল-ইজিবাইকের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করতে হবে।’ উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে ১০ বছর আগেই আমার প্রোটেকশন গাড়িতে হুটার বাজে না। হুটার বাজানো বন্ধ করা দরকার। জরুরি সেবা ছাড়া হুটার বাজানো যাবে না।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সঞ্চালনায় সভায় কার্যপত্র উপস্থাপন করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সচিব নুর মোহাম্মদ মজুম। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ।