পঞ্চবার্ষিক পুনর্মূল্যায়নে ৫-৫০০ গুণ গৃহকর বাড়াবে সিসিক

নূর আহমদ, সিলেট

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

দীর্ঘদিন পর পঞ্চবার্ষিক পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন গৃহকর নির্ধারণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এতে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় এক লাখ ভবন মালিকের গৃহকর ৫-৫০০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। কর্তৃপক্ষ কর নির্ধারণ যৌক্তিক বলে দাবি করলেও ভবন মালিকরা বলছেন অযৌক্তিক।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, যে হারে গৃহকর নির্ধারণ হয়েছে তা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমে মাঠ পর্যায়ে জরিপ হয়। এরপর ২০২১ সালের আগস্টে তৎকালীন পরিষদের বিশেষ সভায় এটি পাস হয়। সেই আলোকে নতুন হারে কর ধার্য অর্থবছর নির্ধারণ করা হয় ২০২১-২২। পরে ৭৫ হাজার ৪৩০টি ভবন থেকে ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তা অনুমোদিত হয়। বর্তমানে সেই হারেই গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যে ভবন মালিকদের নোটিস দিয়েছে সিসিক।

তবে ভবন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর পরিশোধের জন্য ভবন মালিকদের নোটিস দেয়া শুরু করে। পাশাপাশি কর আদায় এবং এ ব্যাপারে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে জানানোর জন্য বিশেষ সেবা কার্যক্রম চালু করে সিসিক। এরপর নগর ভবনে স্থাপিত বুথগুলোয় ভিড় লেগে যায়। অন্যদিকে পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডে এ গৃহকর নির্ধাণিত হলেও নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো মূল্যায়ন চলমান। গৃহকর প্রদানে অভ্যস্ত না থাকা নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে আরো বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গৃহকর বাড়ার এ হার অস্বাভাবিক। এখনো সময় আছে, মেয়র এটি বন্ধ বা বাতিল করে নগরবাসীকে নিয়ে যৌক্তিক কর নির্ধারণ করতে পারেন। অন্যথায় তিনি জনরোষে পড়তে পারেন।’

সিটি করপোরেশন প্রাঙ্গণে স্থাপিত বুথগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনই শত শত লোক গৃহকরের ব্যাপারে তাদের লিখিত আপত্তি সিটি করপোরেশনে জমা দিচ্ছে।

নগরীর মীরের ময়দানের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার একটি একতলা আবাসিক ভবন রয়েছে। আগে বছরে ৫০০ টাকা দিতে হতো। এখন এক লাফে তা ৮ হাজার হয়ে গেছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের যে দাম, তার মধ্যে গৃহকর বৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কর কমানোর জন্য আপিল করেছি, এখন দেখি তারা কী করে। প্রয়োজনে বাসাবাড়ি বিক্রি করে গ্রামের কোথাও গিয়ে আবাস গড়ব।’

এদিকে পঞ্চবার্ষিক মূল্যায়নের নামে সিলেট সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি জেলা শাখা এবং মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ। বর্ধিত কর প্রত্যাহার করে যৌক্তিক কর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গৃহকর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনিও নতুন গৃহকর বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি সব শ্রেণী-পেশার নাগরিকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া আজ নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি।

অন্যদিকে সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদের আহ্বানে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয় একই ইস্যুতে। ওই সভায়ও বক্তারা কর বৃদ্ধির হারকে অস্বাভাবিক দাবি করে তা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। বাসদের উদ্যোগেও নগরীতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সিসিকের প্রধান অ্যাসেসর মো. আব্দুল বাছিত জানান, বর্গফুট প্রতি বাণিজ্যিকে ৮ ও আবাসিকে ৫ টাকা ধার্য করে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোয় মূল্যায়নে চলছে। শেষ হলে করের পরিমাণ জানিয়ে দেয়া হবে। আগেও এ হারেই গৃহকর নেয়া হতো, তবে তা রিভিউ করে কমিয়ে নেয়া হতো।

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মূল্যায়ন করে নতুন হারে গৃহকর নির্ধারণ করায় অনেকের কাছে তা বেশি মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘ বিরতির কারণেই এটা হয়েছে। এতদিন যে কর নেয়া হয়েছে তা ছিল অনেক ক্ষেত্রে অবাস্তব ও নামমাত্র। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন সাধারণ মূল্যায়ন হয়নি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৯-২০ অর্থবছরে গৃহকরের সাধারণ মূল্যায়ন সম্পন্ন করেন। ওই মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত গৃহকর বর্তমান পরিষদ কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে।’

সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দাবি, নগরবাসীকে উন্নয়ন উপহার দিতে হলে গৃহকর আবশ্যিক বিষয়। এটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরোপিত হয়েছে। রিভিউ করার যখন সুযোগ আছে, তখন নিশ্চয়ই নাগরিকরা ন্যায্য সুবিধা পাবেন। সুন্দর ও স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন