চীনে ব্যবসা নিয়ে ইউরোপীয় কোম্পানির উদ্বেগ বাড়ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সম্প্রতি একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে চীন ছবি: এপি

কভিড-১৯-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অর্থনীতিকে এখনো পুরোপুরি চাঙ্গা করতে পারেনি চীন। সাম্প্রতিক দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি আবাসন খাতের পতন এ পরিস্থিতির সঙ্গে নিবিড়ভাব জড়িত, যা দেশটির মন্থর প্রবৃদ্ধিকে চালিত করেছে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনা করা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোও। ইইউ চেম্বার অব কমার্স ইন চায়নার সাম্প্রতিক এক জরিপে এ বিষয়ে উদ্বেগের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে।

মন্থর প্রবৃদ্ধিতে গতি আনতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সম্প্রতি একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে চীন। বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে দেশটির অবস্থানও ওপর দিকে। তবে জরিপে অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের মাত্র ৪২ শতাংশ চলতি বছরে চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছে, যা রেকর্ড সর্বনিম্ন।

সাংহাইয়ে ইইউ চেম্বার অব কমার্স ইন চায়নার প্রধান কার্লো ডি আন্দ্রেয়া জানান, ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। চীনের স্থানীয় কোম্পানি থেকে অর্থ ছাড় দেরি হওয়ায় আগের বছরের তুলনায় চুক্তি কার্যকর কঠিন হয়ে পড়েছে।

তার ভাষ্যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলো অর্থ পরিশোধ স্থগিত করেছে। তারা অনেকটা সুদবিহীন ঋণের মতো এ অর্থ ব্যবহার করছে।

ইইউ চেম্বারের জরিপে ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে চীনে তাদের কোম্পানির লাভের মার্জিন বেশি। তবে এটি আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে ২০২৬ সালে ২৪ শতাংশ একই উত্তর দিয়েছিলেন। তবে তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ ছিল। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে চীনের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়, পাশাপাশি আবাসন খাতের মন্দা ছিল। এ দুই ঘটনা ২০১৬ সালের জরিপকে প্রভাবিত করেছিল বলে জানান ইইউ চেম্বারের প্রেসিডেন্ট জেনস এসকেলুন্ড।

তিনি বলেন, ‘চীনের প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধীরতায় একই ধরনের চক্রাকার প্রকৃতি রয়েছে, কিন্তু এটি কত সময় দীর্ঘ ও গভীর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

সর্বশেষ জরিপটি জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পরের মাসের শুরু পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ৫২৯ জন উত্তরদাতা। এবার নতুন প্রশ্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল, সদর দপ্তরে লভ্যাংশ স্থানান্তর করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে কিনা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা জানান, এমন  কোনো সমস্যা পাননি। তবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ বলেছেন যে তারা কিছু অসুবিধায় পড়েছিলেন।

চীনের অর্থনীতি ২০১৫ ও ২০১৬ সালের তুলনায় এখন অনেক বড়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়েছে, আবার প্রযুক্তি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়াতে উৎপাদন দ্বিগুণ করার লড়াইয়ে নেমেছে বেইজিং।

জেনস এসকেলুন্ড জানান, চেম্বারের সদস্যরা কিছু সমস্যা দেখেছেন। চীনে বাজার সম্প্রসারণ ও মুনাফার সঙ্গে জিডিপি সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। 

তার মতে, সমন্বিত জিডিপি প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন নয়। ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের কারণে যদি উৎপাদন বাড়ে তবে এ জিডিপি বিদেশী সংস্থাগুলোর জন্য ভালো নয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বাড়লে এটি ইতিবাচক।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন লাভের মার্জিন কমিয়ে দেবে। এটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উদ্বেগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

ইইউ চেম্বারের জরিপের উত্তরদাতাদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বলেছেন, গত বছরে তাদের শিল্পে অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। শিগগিরই এটি আরো ১০ শতাংশ বাড়বে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, নির্মাণ ও চালকবিহীন প্রযুক্তি খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে বেশি। উত্তরদাতাদের ৭০ শতাংশের বেশি বলেছেন, অতিরিক্ত সক্ষমতার ফলে পণ্যের দাম কমেছে। ইইউ চেম্বারের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি শুধু ইউরোপীয় সংস্থায় নয়। চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।’

এদিকে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য চীনে উচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা জোরদার হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইইউ দেশের জন্য বেইজিং সাম্প্রতিক ভিসা-ফ্রি সুবিধার পরিমার্জন করেছে। ওই সব দেশের নির্বাহীরা এখন দুই-তিন মাসের পরিবর্তে এক সপ্তাহের মধ্যে চীন ভ্রমণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বেইজিংয়ের কর অব্যাহতি নীতির সম্প্রসারণ আরো বেশি আন্তর্জাতিক কর্মী এবং তাদের পরিবারকে চীনে থাকতে উৎসাহিত করেছে বলে জানান এসকেলুন্ড।

বিদেশী কোম্পানিগুলোর সামনে আসা সমস্যা মোকাবেলায় সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, রেকর্ডসংখ্যক উত্তরদাতা বলেছেন যে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। আগামী দুই বছরে চীনে ব্যবসা বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে তারা সন্দিহান। প্রতিযোগিতামূলক চাপ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন উত্তরদাতাদের বড় একটি অংশ। চীনে ব্যবসা পরিচালনা লাভজনক হবে এ নিয়েও সন্দেহ দেখা যাচ্ছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক বাধা হ্রাস পাবে এমন প্রত্যাশাও রেকর্ড কম।

ইইউ চেম্বারের প্রেসিডেন্ট জেনস এসকেলুন্ড বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বর্তমান নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অনেক উদ্বেগ প্রায় আগের মতোই রয়ে গেছে। স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বা চাহিদার পতন আরো স্থায়ী হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। এ পরিস্থিতি এরই মধ্যে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন