মাইন্ডফুল ইটিং: স্বাস্থ্যকর জীবন গঠনের অন্যতম অভ্যাস

সাদিয়া শাহরিণ শিফা

ছবি : সাদিয়া শাহরিণ শিফা

দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য গ্রহণে আমরা কতটা সচেতন? বেশিরভাগ বেলায়ই আমাদের নানান ধরনের কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে বেশ অসচেতনভাবেই খাদ্য গ্রহণ করা হয়। তবে সারা দিনে যতই কাজ থাকুক না কেন, সুস্থ দেহের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাদ্য গ্রহণ। তাই আমাদের খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি অবশ্যই সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বলতে সে ধরনের খাদ্যাভ্যাসকে বোঝায় যা সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বা স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। মাইন্ডফুলনেস হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে শারীরিক ও মানসিক সকল মনোযোগ একত্রিত করে ওই মুহূর্তে উপস্থিত থাকা, ওই মুহূর্তকে সার্বিকভাবে উপলব্ধি করা।  

‘মাইন্ডফুল ইটিং’ হলো এমন খাদ্যাভ্যাস যা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকরই নয় বরং দৈনন্দিন জীবনে আমাদের লাইফস্টাইলে ইতিবাচক পরিবর্তনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। কীভাবে? চলুন জেনে নিই।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক তেরেসা টি ফুং ও তার সহকর্মীরা মিলে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসকে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ এর আওতায় এনে ৪টি ভাগে ভাগ করেন-

কী খেতে হবে

আমরা কী খাই এবং কেন খাই

আমরা কতটুকু খাই

আমরা কিভাবে খাচ্ছি?

আমরা প্রতিদিন খাবার খাচ্ছি তবে আমাদের খাবার সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? খাবার সময় আমাদের চিন্তা এবং উপলব্ধিই বা কি হওয়া উচিত?

এক্ষেত্রে আমরা Savor: Mindful Eating, Mindful Life এ বই থেকে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ এর ৭টি অভ্যাস সম্পর্কে জানতে পারি, যা আমাদের খাদ্যাভ্যাসকে স্বাস্থ্যকর করবে। পাশাপাশি আমরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই খাবার খাব না, আমাদের খাদ্য গ্রহণ হবে অর্থপূর্ণ।

দৈনিক খাদ্য গ্রহণে এ ৭টি অভ্যাস চর্চা করুন:

১। খাদ্যকে সম্মান করুন: কোনো খাবার মাঠ পর্যায়ে জন্মানো থেকে আপনার কাছে পৌঁছানো এবং রান্না হয়ে প্লেটে আসা পর্যন্ত কতগুলো ধাপ অতিক্রম করেছে তা উপলব্ধি করুন। এটি আপনার খাওয়ার রুচি যেমন বাড়াবে তেমনি খাওয়ার অভিজ্ঞতাকে করবে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয়।

২। খাদ্যকে অনুভব করুন: খাওয়ার সময় খাবারের রং, ঘ্রাণ, জমিন, শব্দ সব কিছুর প্রতি লক্ষ্য রাখুন। এ সময় সব মনোযোগ শুধুমাত্র খাবারের প্রতিই দিবেন। এতে করে সব খাবারের পরিপূর্ণ স্বাদ যেমন পাবেন তেমনি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি আপনার জন্য সহজ হবে।

৩। পরিমিত পরিমাণে খাবার নিন: অল্প অল্প করে খাবার নেয়া অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার প্লেটে না নেয়া- আপনার বেশি খাবার প্রবণতা কমাবে এবং খাবারের অপচয় এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে ছোট প্লেটে অথবা বাটিতে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

৪। ছোট ছোট করে খাবার মুখে নিন এবং ভালো করে চিবিয়ে খান: এভাবে খাওয়ার অভ্যাস আপনার হজম ও পরিপাকে সাহায্য করবে তো বটেই উপরন্তু আপনি খাবারের পূর্ণ স্বাদ-গন্ধ ও গঠন উপভোগ করতে পারবেন।

৫। ধীরে ধীরে খাবার খান: দ্রুত খাবার খাওয়ার ফলে আমরা বেশিরভাগ সময়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। ফলে হজমে সমস্যার পাশাপাশি আমাদের ওজনও বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও দেখা দেয় গাস্ট্রিকের সমস্যা। ধীরে খাওয়ার ফলে আপনার পেট ভরেছে কিনা সেটি আপনি অনুভব করতে পারেন। আপনার যখন মনে হবে আপনার পেটের ৮০ শতাংশ ভরেছে, তখন খাওয়া বন্ধ করতে পারেন।

৬। কোনো বেলার খাবার এড়িয়ে চলবেন না: খাবার এড়িয়ে চললে, বেশিক্ষণ ক্ষুধার্ত থাকার পর স্বাভাবিকভাবেই সহজ যেকোনো খাবার আমরা খাদ্য হিসেবে বেছে নিই যা বেশিরভাগ সময়ই স্বাস্থ্যকর হয় না। পাশাপাশি খাবার সময়মতো না খেয়ে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে দেহের মেটাবলিজম কমে যায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই কোনো বেলার খাবার এড়িয়ে চলবেন না।

৭। প্লান্ট-বেজড ডায়েট বেছে নিন: খাবার বাছাইয়ের আগে ভেবে নিন এটি দীর্ঘ মেয়াদিভাবে আপনার ওপর কী প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। যেমন: প্রসেসড ফুড বা জাঙ্ক ফুড আপনার শরীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন এ ধরনের খাবার খেলে দেখা দেবে স্থূলতা, হৃদরোগ, লিভারে সমস্যা, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব। অপর দিকে আপনি যখন উদ্ভিদ জাতীয় খাবার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বেছে নেবেন তখন শরীর থাকবে সুস্থ, সবল ও সতেজ। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে বহুগুণে। 

এভাবেই উপরোক্ত ৭টি অভ্যাস চর্চার মাধ্যমে আমরা মাইন্ডফুল ইটিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।

এ অভ্যাস চর্চা করার মাধ্যমে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়-

ঘন ঘন ক্ষুধা পায় না।

অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমবে।

খাবার সঠিকভাবে হজম হবে।

বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, আইবিএসের মতন শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

অতিরিক্ত দৈহিক ওজন কমবে। 

বাংলাদেশে সাধারণত এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ চর্চার বিষয়টি নেই, তবে ভিন্নধর্মী ইন্টিগ্রেটিভ ক্লিনিক আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টারে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস চর্চায় রোগীদেরকে সর্বদা উৎসাহিত করা হয়। এখানকার আবাসিক ভর্তি সেবা ‘আমেরিকান ওয়েলনেস হোম’ এবং বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য ‘আমেরিকান ডায়েটেটিক্স ডিপার্টমেন্ট’ থেকে মাইন্ডফুল ইটিংয়ের পরামর্শ দেয়া হয় এবং রোগীদের এ অভ্যাস চর্চায় উৎসাহিত করা হয়।

মাইন্ডফুল ইটিং শুধু মাত্র একটি সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই নয়, সামগ্রিক সু-স্বাস্থ্যের জন্য এটি অপরিহার্য। তাই সবার জন্যই এ অভ্যাস চর্চা করা প্রয়োজনীয়।

সাদিয়া শাহরিণ শিফা: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন