আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রোসাটমের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বাসস

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল গণভবনে সাক্ষাৎ করেন রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ ছবি: বাসস

সুযোগ থাকলে রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ গতকাল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) জায়গায় নতুন আরেকটি প্লান্ট নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, দুটি নতুন ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত জরিপ করা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ান ফেডারেশনে আরএনপিপির প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ ফিরিয়ে নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন রোসাটম মহাপরিচালক। 

রাশিয়ান ফেডারেশনে আরএনপিপির ব্যয়িত পারমাণবিক জ্বালানি ফেরত দিতে এরই মধ্যে দুই দেশ একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিতে সই করেছে।

বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। আরেক দফায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনকে শুভেচ্ছাও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীকে আরএনপিপির অগ্রগতি সম্পর্কে জানান আলেক্সি লিখাচেভ। তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে আরএনপিপি উৎপাদনে আসবে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ করতে সক্ষম হবে। আরএনপিপির ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’

রোসাটম মহাপরিচালক আরএনপিপি এলাকায় দুটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের প্রস্তাবও দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, ‘বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিক লাভজনক ও যুক্তিসংগত। বাংলাদেশী ও রাশিয়ানসহ প্রায় ২ হাজার ৫০০ কর্মী এ প্রকল্পে কাজ করছেন, যারা দক্ষতা অর্জন করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী রোসাটম মহাপরিচালককে বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগাতে বলেন।

আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, ‘মহামারী ও স্যাংশনের জন্য প্রতিবন্ধকতা ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বাভাবিক গতিতেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৌশলগতভাবে এ বাধা এড়ানো গেছে।’

সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে, আরএনপিপি এলাকায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের (১ হাজার ২০০ করে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট) নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ আগামী ডিসেম্বরে শুরু হবে। ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে যথাক্রমে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন