সারি সারি বিদ্যুতের খুঁটি। আছে ৩৩ কেভি লাইন। গ্রাহক অনুযায়ী বসানো হয়েছে ট্রান্সফরমারও। বাড়ি, দোকান কিংবা উপাসনালয়ে করা হয়েছে ওয়্যারিং। নেই শুধু বিদ্যুৎ। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সব ক্ষেত্রেই নির্ধারিত মূল্যের বেশি টাকা দেয়া হয়েছে, তার পরও মিলছে না বিদ্যুৎ। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, গাছ কাটা নিয়ে জটিলতার কারণে বেগ পেতে হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
সরজমিনে দেখা গেছে, পাঁচ বছর আগে অর্ধলাখ টাকা খরচ করে ঘরবাড়ি ও ফার্মেসি ওয়্যারিং করেছেন মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর নোমান গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মো. সোহেল। ঘরে এনেছেন টেলিভিশন, ফ্রিজ। ঝুলিয়েছেন বৈদ্যুতিক পাখাও। কিন্তু বিদ্যুৎই আসেনি তার ঘরে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিদ্যুৎ পাওয়ার স্বপ্ন দেখান স্থানীয় সাংসদ। সেটিও স্বপ্নই থেকে গেছে।
মো. সোহেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঘরবাড়ি ও একটি ফার্মেসিসহ ওয়্যারিং খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি মিটারের জন্য ১ হাজার ৮০০ টাকা করে দিয়েছি। এর বাইরে বিদ্যুতের খুঁটি আনা, তার লাগানোসহ বিভিন্ন খাতে আরো অন্তত ৩ হাজার টাকা খরচ করেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ চলে আসবে বলায় ফ্রিজ, টিভি, লাইট ও ফ্যানও লাগিয়েছি ঘরে। অথচ এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাইনি।’
পল্লী চিকিৎসক সোহেলের মতো অবস্থা সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুরপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামের আড়াই হাজার গ্রাহকের। তাদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের নির্ধারিত ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ঘর অনুযায়ী ১০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ওয়্যারিংয়ে খরচ হয়েছে। খুঁটি বসানো হয়েছে বাড়ির আঙিনায়। বসানো হয়েছে মিটারও। এসবের জন্য নির্ধারিত খরচের বাইরেও অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় আগেই ৩৩ কেভি লাইন টেনেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু আজও মেলেনি বিদ্যুৎ। এতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
চর নোমানের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদপুর কাদির বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে মানুষ সঠিকভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ঘরবাড়ি ওয়্যারিং করা শেষ। বোরো চাষের জন্য একটি ডিপ টিউবওয়েলও স্থাপন করেছি। কিন্তু কিছুই হলো না। এভাবে পাঁচ বছরের বেশি সময় অপেক্ষায় কাটছে আমাদের।’
চর লক্ষ্মী গ্রামের কৃষক খোকন জানান, তিনি কৃষি মিটার, বাড়ির মিটার ও পার্শ্ববর্তী দোকানেও মিটার বসিয়েছেন। বিদ্যুৎ সঠিক সময়ে এলে তিনি কৃষি মিটারের আওতায় অন্তত চার একর জমিতে বোরোসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করতে পারতেন। একটি গরুর খামার করারও স্বপ্ন দেখেছেন। দফায় দফায় টাকা দিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত ফির বাইরেও টাকা দেয়া হয়েছে। খুঁটি লাগানোর জন্য ট্রিট দিতে হয়েছে, খুঁটি থেকে ঘরের মিটার পর্যন্ত তার টানার সময়ও ট্রিট দিতে হয়েছে। এভাবে টাকা দিয়েও তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি, সারা দেশের মধ্যে বিদ্যুতায়নে এগিয়ে আছে নোয়াখালী। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতেই সরবরাহে বিনিয়োগ করেছেন তারা। তবে গাছ কাটাসংক্রান্ত জটিলতা থাকায় বিদ্যুতায়নে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর আশ্বাস দিয়েছেন সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন।
তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দ্রুত বিদ্যুতায়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেছেন। কিন্তু গাছ কাটা নিয়ে জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংসহ বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোকজন গাছ কাটতে চাচ্ছে না।’ তবে চলতি মাসের মধ্যে বন বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।