উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে এশিয়ায় রেকর্ড এলএনজি রফতানি যুক্তরাষ্ট্রের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দুটি জলপথ সুয়েজ ও পানামা খাল। ভূরাজনৈতিক সংঘাত ও খরার কারণে লম্বা সময় ধরেই খাল দুটি দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকা উপকূল (উত্তমাশা অন্তরীপ) ব্যবহার করে এশিয়ার দেশগুলোয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের দেয়া তথ্যমতে, ২৭ মার্চ পর্যন্ত উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে এশিয়ায় পৌঁছেছে ২৪টি মার্কিন এলএনজিবাহী কার্গো, যা এক মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ। এ পথ দিয়ে চলতি মাসে এশিয়ায় ঢুকেছে অন্তত ১৬ লাখ টন এলএনজি।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের হিসাব অনুযায়ী, ৩০-৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গালফ কোস্ট থেকে যেসব এলএনজি রফতানির উদ্দেশ্যে কার্গো বোঝাই করা হবে, ২৭ মার্চ ফি অন বোর্ড চুক্তিতে সেসব এলএনজির মূল্য ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৮ ডলার ৮৭ সেন্ট, যা এর আগের দিনের তুলনায় ১৬ সেন্ট বেশি।

এল নিনোর প্রভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে পানামা। ফলে পানামা খালের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। রফতানিকারকরা আফ্রিকা মহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে এশিয়ায় পণ্য পরিবহনে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জলপথটির ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে।

পানামা খাল দিয়ে এখনো এলএনজিবাহী কার্গো চলাচলের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে এসব কার্গোকে পারাপারে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিলম্ব এড়াতে রফতানিকারকরা গত বছরের গ্রীষ্মের শুরু থেকেই রুট বদলেছেন।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পানামা খাল ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়ায় ঢুকেছে মাত্র ১৪টি এলএনজিবাহী কার্গো। গত বছরের একই সময় যা ছিল ৪০টি। মার্চে পথটি ব্যবহার করেছে মাত্র একটি এশিয়ামুখী এলএনজি কার্গো।

পানামা খালে সৃষ্ট এ জটিলতার কারণে গত বছর রফতানিকারকরা এশিয়ায় ঢোকার ক্ষেত্রে একমাত্র দ্রুততম জলপথ হিসেবে বেছে নেন সুয়েজ খালকে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ পথ দিয়ে এশিয়ার বাজারে কয়েক বছরের সর্বোচ্চ এলএনজি রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই মাসে সুয়েজ খাল দিয়ে ১৭টি মার্কিন এলএনজিবাহী কার্গো এশিয়ার বন্দরগুলোয় ভিড়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে সিরিজ হামলা চালালে এ পথ দিয়েও জাহাজ চলাচল অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ঝুঁকি এড়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানি এ রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সুয়েজ খাল হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঢুকেছে মাত্র সাতটি মার্কিন এলএনজিবাহী কার্গো। গত বছরের একই সময় এ সংখ্যা ছিল ২৬।

এদিকে ইউরোপের বাজারেও অব্যাহত বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে এলএনজি আমদানির বড় উৎসে পরিণত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে ১৬টি মার্কিন এলএনজিবাহী কার্গো পৌঁছেছে, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। একই সময় নেদারল্যান্ডসে গেছে ১২টি কার্গো। যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ছয় কার্গো মার্কিন এলএনজি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন