জবি ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যা

সহপাঠী ও শিক্ষক রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আম্মানের দুদিন ও দ্বীন ইসলামের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক এ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। 

গত শুক্রবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে ফেসবুকে একটি সুইসাইড নোট পোস্ট করেন জবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। ওই রাতেই কুমিল্লা শহরের নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। সুইসাইড নোটে অবন্তিকা লিখেছিলেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।’ 

অবন্তিকাকে ‘আত্মহননে বাধ্য করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে’ ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে শুক্রবার রাতেই বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে পরদিন রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে মেয়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। শনিবার রাতে দুই আসামিকে গ্রেফতারের পর রোববার তাদের কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। 

এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আক্কাস। তিনি বলেন, ‘অবন্তিকা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল বিচারক হবে। কয়েক দিন পর তার স্নাতকের ফল প্রকাশ হবে। এমন মেধাবী ছাত্রী চলে যাওয়ায় জাতি অনেক কিছু হারিয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি, এ ঘটনার সঠিক-সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।’ মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আজকে অবন্তিকা কালকে কে?’, ‘সুইসাইড নয়, টেকনিক্যাল মার্ডার’ ইত্যাদি। 

আত্মহত্যার আগে অবন্তিকা ফেসবুকে যেসব অভিযোগ করে গেছেন তা তদন্তে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ চেয়ে গতকাল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রকৃত ঘটনার বিষয়ে তথ্য ও উপযুক্ত প্রমাণ প্রয়োজন। তাই কারো কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ থাকলে ২০ মার্চের মধ্যে তা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনের কাছে জমা দেয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন