সুপার ফোরে টানা দ্বিতীয় হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে গতকাল ৯৭ বলে ৮২ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেও বাংলাদেশকে জেতাতে পারেননি তৌহিদ হৃদয় ছবি: এপি

এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারল বাংলাদেশ। গতকাল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলংকার কাছে ২১ রানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। এটি টানা ১৩তম জয় শ্রীলংকার, যা পুরুষদের ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেরা জয়রথ। 

কলম্বোয় ধীরগতির উইকেটে ২৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এর আগে লাহোরে পাকিস্তানের কাছে সাত উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। টানা দুই হারে ফাইনালে ওঠার সুযোগ শেষ হয়ে গেল সাকিবদের।

চলতি আসরে স্বাগতিক শ্রীলংকার কাছে এটা টানা দ্বিতীয় হার বাংলাদেশের। এর আগে পাল্লেকেলেতে গ্রুপ পর্বেও সিংহলিজদের কাছে হেরে যায় তারা। পরে আফগানদের হারিয়ে সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সুপার ফোর পর্বে দুই ম্যাচে জয়হীন সাকিব-তাসকিনরা।  

গতকাল টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। ধীরগতির উইকেট বিবেচনায় নিয়ে একজন বোলার বেশি খেলায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেনকে বাদ দিয়ে স্পিনার নাসুম আহমেদকে এদিন সুযোগ করে দেয়া হয়। নাসুম মিতব্যয়ী বোলিং করে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৩১ রান। যদিও উইকেট নিতে পারেননি। পেসাররা অবশ্য সফল। হাসান মাহমুদ (৩/৫৭) ও তাসকিন আহমেদ (৩/৬২) তিনটি করে ও শরিফুল ইসলাম (২/৪৮) দুটি উইকেট নেন। তিন পেসার মিলে নেন ৮ উইকেট। বাকি উইকেটটি ছিল রানআউট। 

দিমুথ করুণারত্নেকে (১৮) ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বিদায় করেন হাসান মাহমুদ। এরপর লংকানদের ভিত গড়ে দেন পাথুম নিশাঙ্কা (৪০) ও কুশল মেন্ডিস (৫০)। এ দুজনকেই সাজঘরে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল। যদিও তাদের ৭৪ রানের জুটি দলের জন্য দারুণ কার্যকর হয়। এ ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে লংকানদের আড়াইশোর্ধ্ব সংগ্রহ এনে দেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৭২ বলে ৯৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি আটটি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কার সাহায্যে। ইনিংসের শেষ বলে তিনি তাসকিনের শিকার হন। 

আউট হওয়ার আগে চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে ২৭, ধনাঞ্জয়াকে নিয়ে ২০, দাসুন শানাকাকে নিয়ে ৬০, দুনিথ বেলালাগেকে নিয়ে ১৯ ও কাসুন রাজিথাকে নিয়ে ১১ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন সামারাবিক্রমা। 

জবাব দিতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখ ওপেনিং জুটিতে ৬৭ বলে ৫৫ রান তুলে দেন বাংলাদেশকে। মিরাজ ২৯ বলে ২৮ রান করলেও নাঈম শম্বুকগতিতে রান তোলেন। তিনি ৪৬ বলে মাত্র ২১ রান করেন। মাত্র পাঁচ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারের বিদায় ঘটে (৬০/২)। দুজনকেই সাজঘরের পথ দেখান লংকান দলনায়ক শানাকা। দলের আশা-ভরসা সাকিব আল হাসান (৫) ও লিটন দাসের (১৫) ব্যাট গতকাল হাসেনি। সাকিবকে ফেরান গতি বোলার মাথিসা পাথিরানা আর স্পিনার বেলালাগের শিকার হন লিটন। ৮৩ রানের সময় দলের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। 

পঞ্চম উইকেটে ১১২ বলে ৭২ রান যোগ করে বিপর্যয় সামাল দেন মুশফিকুর রহিম ও তৌহিদ হৃদয়। মুশফিক ২৯ রান করে শানাকার তৃতীয় শিকারে পরিণত হলেও লড়াই চলতে থাকে তৌহিদের। যদিও বিফলেই যায় তার নিঃসঙ্গ লড়াই। শামীম হোসেন ৫ রান করে মহিশ থিকসানার শিকার হন। নিজের পরের ওভারে তৌহিদ ও তাসকিন দুজনকেই সাজঘরে ফেরান থিকসানা। তিনজনকেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এ স্পিনার। পরে শরিফুল ও নাসুমকে বোল্ড করে বাংলাদেশের ইনিংস ২৩৬ রানে গুটিয়ে দেন পাথিরানা। 

হার শেষে সাকিব বলেন, ‘বোলিংয়ে আমরা দারুণভাবে ফিরে এলেও সাদিরা অসাধারণ খেলেছে। ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডার মোটেও ভালো করিনি। আমাদের ৮০-১০০ রানের জুটি গড়ার প্রয়োজন ছিল। তৌহিদ অসাধারণ খেলেছে। সে এখানে এলপিএল খেলেছে, সেই আত্মবিশ্বাস কাজে দিয়েছে।’

এ জয়ের মধ্য দিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়ল শ্রীলংকা। এটা তাদের টানা ১৩তম ওয়ানডে জয়। টানা জয়ে দুইয়ে উঠে গেল তারা। ১২ জয়ে পাকিস্তান (২০০৭-০৮) ও দক্ষিণ আফ্রিকার (দুবার ২০০৫ ও ২০১৬-১৭) সঙ্গে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিংহলিজরা। গতকালের জয়ে পাকিস্তানকে টপকে এককভবে দুইয়ে উঠল ‘ভারত মহাসাগরের মুক্তা’খ্যাত দেশটি। এখন তাদের সামনে শুধুই অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালে টানা ২১টি ম্যাচ জিতেছিল অজিরা। 

এদিকে আজ কলম্বোয় হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়। সুপার ফোরে প্রতিটি দল তিনটি করে ম্যাচ খেলবে। শীর্ষ দুটি দল খেলবে ফাইনালে। শুক্রবার সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলংকা: ৫০ ওভারে ২৫৭/৯ (সামারাবিক্রমা ৯৩, কুশল ৫০, পাথুম ৪০; হাসান ৩/৫৭, তাসকিন ৩/৬২, শরিফুল ২/৪৮)। বাংলাদেশ: ৪৮.১ ওভারে ২৩৬/১০ (তৌহিদ ৮২, মুশফিক ২৯; শানাকা ৩/২৮, পাথিরানা ৩/৫৮, থিকসানা ৩/৬৯)। ফল: শ্রীলংকা ২১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: সাদিরা সামারাবিক্রমা (শ্রীলংকা)।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন