নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তাদের নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে সব দলের নির্বিঘ্ন প্রচার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা রোধ ও হয়রানিমূলক মামলা না করাসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা এবং কোনো ধরনের হয়রানিমূলক মামলা না করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জাতীয় সংসদে গতকাল গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সংসদকাজে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
মন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। তারা কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন। বর্তমান ইসি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এরই মধ্যে তারা নানা অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, নতুন দলের নিবন্ধনসহ কর্মপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় আগে থেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিয়েছে। সংবিধান, আরপিও-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার আলোচনা, প্রচলিত বিভিন্ন আইন ও বাস্তবতার নিরিখে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তৎপর রয়েছে ইসি।
নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য ইসির নেয়া পদক্ষেপগুলো সংসদে তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। ইসি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী অধিকাংশজন যে সুপারিশগুলো করেছে তা বাস্তবায়ন। সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা। সরকারের কোনো সংস্থার হয়রানিমূলক মামলা না করা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থকের মাধ্যমে প্রার্থী, সমর্থক, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা এবং এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া।
ইসির সিদ্ধান্তের মধ্যে আরো রয়েছে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনে তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া। ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন। নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার কোনো বিধি ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচনী আচরণবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন। যোগ্য ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ বিধিসম্মতভাবে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত নেয়া।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব প্রার্থীর প্রতি সম-আচরণ করবে। সেই সঙ্গে ইসির অধিকসংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ, নিরপেক্ষ প্রিসাইডিং-সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে। নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি বা নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
