ঈদযাত্রা

বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক নিয়ে দুশ্চিন্তা

শামীম রাহমান

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেহাল দশা। বৃষ্টি নামলেই বাড়ে জনদুর্ভোগ। যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ

ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ বিমানবন্দর হয়ে বনানী থেকে গাজীপুর। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশির ভাগ যানবাহন মহাসড়কটির অংশ ব্যবহার করে। একই সঙ্গে ময়মনসিংহ গাজীপুর এলাকার শিল্প-কারখানার উৎপাদিত পণ্য পরিবহনেরও একমাত্র পথ বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক। সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের হিসাবে, মহাসড়কটির টঙ্গী অংশে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে, যা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

ব্যস্ত পথ ধরেই চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণকাজ। কয়েক বছর ধরে চলা প্রকল্পের কাজ, জলাবদ্ধতা আর নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের যানজটপ্রবণ সড়কগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর মহাসড়ক। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও তাই মহাসড়ক বিভাগের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পথ।

রমজান ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহাখালী, বিমানবন্দর, উত্তরা গাজীপুর সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন যানজটমুক্ত রাখার জন্য আগামীকাল সভা আহ্বান করেছে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ। বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজের জন্য মহাসড়কটিতে যেন কোনো ধরনের যানজট না হয় সে লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ এবং গাজীপুর এলাকায় থাকা শিল্প-কারখানাগুলোয় ঈদের ছুটি পৃথক দিনে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে সভায়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটির মাঝ বরাবর আরেকটি বিশেষায়িত বাস লেন তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকেই ব্যস্ততম সড়কটির যানজট আরো তীব্র হয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে নির্মাণকাজে ধীরগতি, সৃষ্ট খানাখন্দে জলাবদ্ধতা, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা নানা ধরনের অনিয়মের কারণে ততই বেড়েছে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে যানজট।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে মহাসড়কটির কিছু অংশ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, বিআরটি করিডোরে টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী স্টেশন রোড, ময়মনসিংহ রোড, ভোগড়া এলাকায় বৃষ্টির পানির কারণে ব্যাপক যানজট হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এক পাশে দুই লেনের সড়ক এক লেনে পরিণত হয়। বিআরটি করিডোরে সড়ক বিভাজক না থাকায় যেখানে-সেখানে গাড়ি চলাচলের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটেরও সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে এক বছর আগের এসব সমস্যা এখনো বিদ্যমান। মহাসড়কটির ১৯ স্থানে তৈরি হচ্ছে বিআরটির স্টেশন, যেগুলোর কাজ চলমান। রাস্তার মাঝ বরাবর স্টেশন নির্মাণের কারণে এমনিতেই দুই পাশের সড়ক কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। পাশাপাশি চলমান নির্মাণকাজের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল, যা ঈদযাত্রার সময় প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

অবকাঠামোগত এসব সমস্যার পাশাপাশি বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা অব্যবস্থাপনাকেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ঈদ উপলক্ষে গাজীপুর এলাকার গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা গাড়ি রিজার্ভ করেন। সেই গাড়িগুলো পার্ক করে রাখা হয় রাস্তার পাশে। কারণে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে শ্রমিকদের আরেকটি অংশ টার্মিনাল বা কাউন্টার ব্যবহার করেন না। চলাচলরত যেকোনো বাসে ওঠার জন্য তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। আবার এসব যাত্রীকে টার্গেট করে কিছু বাস রাস্তার বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে, যা যানজটের অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে সড়কে লোকাল বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, রিকশা-ভ্যানের মতো ধীরগতির যানবাহন চলাচলের কারণেও ঈদের সময় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে যানজট তীব্র হয়ে ওঠে।

ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম যদিও মনে করছেন, বিগত ঈদযাত্রার চেয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতরে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে যানজটের তীব্রতা অনেকটাই কম থাকবে। সম্পর্কে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বিআরটি করিডোরের কাজ আমরা অনেকটাই শেষ করে এনেছি। 

বর্তমানে এর স্টেশনগুলোয় কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যেগুলোর কারণে যান চলাচলে কিছুটা ধীরগতি থাকতে পারে। আর ঈদের সময় যেন কোনো জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য আমরা ঈদযাত্রার আগেই ড্রেনগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।

বিআরটি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণাধীন প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ টঙ্গী ফ্লাইওভারের দুটি লেন গত বছরের নভেম্বর চালু করা হয়েছে। আসন্ন ঈদযাত্রার যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে সফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ফ্লাইওভারের দুটি লেন দিয়ে দ্বিমুখী যান চলাচল করছে। আমরা পরিকল্পনা করছি, ঈদের আগে ফ্লাইওভারের দুটি লেন শুধু ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহনগুলো ব্যবহার করবে। একইভাবে ঈদের পর লেন দুটি শুধু ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে। এটা করতে পারলে মহাসড়কটির যানজট অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি ঈদযাত্রায় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের যানজট নিরসনে সড়কের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প-কারখানাগুলোর ছুটি আলাদা দিনে করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন