
কভিড-১৯ বিধিনিষেধের পর চীনে যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি সরবরাহ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনেক প্রতিষ্ঠানকে কারখানা স্থানান্তরে বাধ্য করছে। অ্যাপলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন টেকনোলজি কার্যক্রম স্থানান্তরের অংশ হিসেবে ভারতে ৭০ কোটি ডলার ব্যয়ে নতুন কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছে। এ বিষয়ে অবগত সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে। খবর ফ্রিমালয়েশিয়াটুডে।
ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। যে কারণে বর্তমানে চীনে যেসব প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানটি এর ফ্ল্যাগশিপ ইউনিট হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রির জন্যও পরিচিত। দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের কাছে ৩০০ একর জমিতে এ কারখানা স্থাপন করবে। কারখানাটিতে আইফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে দুটি অবগত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কয়েকজন জানায়, কারখানাটিতে অ্যাপলের হ্যান্ডসেট অ্যাসেম্বল করাও হতে পারে। এছাড়াও ফক্সকন নাসছেন্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবসার জন্য কিছু যন্ত্রাংশ এ কারখানায় তৈরি করতে পারে বলেও জানা গেছে। ভারতে এ কারখানা স্থাপন ফক্সকনের অন্যতম একক বড় বিনিয়োগের একটি। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ের বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনে চীন কীভাবে শীর্ষস্থান হারাচ্ছে সে বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাপলসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে কারখানা স্থানান্তরের জন্য চীনভিত্তিক সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভর করছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়েছিল। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বৈদ্যুতিক পণ্যের বাজারে পরিবর্তন আসবে। এসব কারণে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে নতুন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফক্সকন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন উৎপাদন কারখানাটি ভারতে ১ লাখের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। যেখানে চীনের ঝেংঝুতে অবস্থিত আইফোন অ্যাসেম্বলি কারখানায় বর্তমানে ২ লাখের বেশি কর্মী রয়েছে। এছাড়া চাহিদা বাড়লে কারখানার কর্মী সংখ্যাও বাড়ানো হয়। কভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে ২০২২ সালে বছর শেষের ছুটিতে ঝেংঝু কারখানার উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। যে কারণে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল বর্তমানে এর চীনা সরবরাহ চেইনের বিকল্প খুঁজছে। ফক্সকনের উদ্যোগের মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই দ্রুত সময়ের মধ্যে চীন থেকে কার্যক্রম সরিয়ে নেবে।
ফক্সকন এখন নতুন পরিকল্পনার বিনিয়োগ হার ও বাকি কাজ নিয়ে ভাবছে। তাই প্রকল্পে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এটি ফক্সকনের নতুন কারখানা নাকি চীন থেকে স্থানান্তর কার্যক্রমের অংশ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও অ্যাপলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। চলতি সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হন হাইয়ের চেয়ারম্যান ইয়াং লিউ। তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি। ভারত সফরে থাকা লিউ তেলেঙ্গানা রাজ্যে আরেকটি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন।
ফক্সকনের এ সিদ্ধান্ত মোদি সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে। কেননা এর মাধ্যমে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত যে দূরত্ব রয়েছে তা অনেকটাই কমে আসবে। অন্যদিকে ভারত ফক্সকনের মতো অ্যাপল সরবরাহকারীদের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর তামিলনাড়ুর একটি সাইটে সর্বশেষ প্রজন্মের আইফোন তৈরি শুরু করেছে। ফক্সকনের প্রতিযোগী উইস্ট্রন করপোরেশন ও পেগাট্রন করপোরেশনও ভারতে কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া সরবরাহকারীদের মধ্যে জাবিল স্থানীয়ভাবে এয়ারপডের যন্ত্রাংশ উৎপাদন শুরু করেছে।