কুমারদের নিয়ে তৈরি শর্টফিল্ম পুরস্কার জিতল ব্রাজিলে

সাবিহা জামান শশী

ব্রাজিলের ‘ফেস্টিভ্যাল ডি সিনেমা অল্টার ডু চাও ২০২২’ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে চৈতন্য রাজবংশীর স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘মাটিশ্বর’। উৎসবের প্রতিযোগিতা পর্বে ‘স্মার্টফোন ইন্টারন্যাশনাল’ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের তরুণ এ নির্মাতা। বিদেশী উৎসবে পুরস্কার জিতে বিস্মিত ও আনন্দিত চৈতন্য রাজবংশী।

মুঠোফোনে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এ নির্মাতা। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‌আমার বেড়ে ওঠা যেখানে, তার পাশেই রয়েছে কুমার পাড়া। তবে আমি কুমারদের জীবন নিয়ে এখনই একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করব, এমন পরিকল্পনা ছিল না। আমি থিয়েটারের জন্য একটা চিত্রনাট্য লিখছিলাম। তবে করোনার সময়ে দেশের বাড়ি চলে যাই, আর এ সময়ে আমার ক্যামেরা, ল্যাপটপসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট, যা দিয়ে আমি কাজ করি, সব ঢাকায় রেখে এসেছিলাম। তাই কোনো কাজ করতে পারছিলাম না। পরে একদিন কুমারপাড়ায় যাই, তখন আমার সঙ্গে কেবল মোবাইল ফোনটাই ছিল। ফোন দিয়েই আমি প্রামাণ্যচিত্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে মজার কথা হচ্ছে আমি তাদের কেবল বলেছিলাম যে আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করব আর আপনারা যে উত্তর দেবেন, সেটা ভিডিও করব। প্রায় এক মাস নিয়মিত আমি কুমার পাড়ায় গিয়ে থেকেছি। ওদের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলেই মাটিশ্বরের শুটিং শেষ করেছিলাম। এরপর এক বন্ধুর কাছ থেকে ল্যাপটপ এনে এডিটিংয়ের কাজ করেছিলাম।’ 

ব্রাজিলের চলচ্চিত্র উৎসবটি ১৬ নভেম্বর শুরু হয়ে ২০ নভেম্বর শেষ হয়। সারা বিশ্ব থেকেই নির্মাতারা এ প্রতিযোগিতায় তাদের কাজ তুলে ধরেন। কোনো কিছু না ভেবেই নিজের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র মাটিশ্বর এ প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিলেন চৈতন্য রাজবংশী। আর ২১ নভেম্বর চূড়ান্ত বিচারের পর ‘ফেস্টিভ্যাল ডি সিনেমা অল্টার ডু চাও ২০২২’-এর ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়া হয় বিজয়ীদের নাম। এ অর্জনের কথা নিয়ে চৈতন্য আরো বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে মাটিশ্বরের গল্পটা নিজের থেকেই আমার কাছে ধরা দিয়েছে। ওই তাড়না থেকেই আমার কাজ করা। কুমারদের শিল্পকর্ম নিয়ে কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু মাটির সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক, আমি সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তারা মাটিকে দেবতার মতো দেখে। তাদের বিশ্বাস মাটির মধ্যে ঈশ্বর আছে। এর আগেও কুমারদের নিয়ে বিভিন্ন কাজ হয়েছে, যেখানে শৈল্পিক বিষয়টা দেখানো হয়েছে। তবে আমি মাটির সঙ্গে আমাদের দেশের কুমারদের যে আত্মিক সম্পর্ক দেখেছি, সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তারা বলে, মাটিকে তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম করে ব্যবহার করে, তবু মাটি তাদের কিছু বলে না। কারণ মাটি তাদের মা। এসব আত্মিক বিষয় আছে এ প্রামাণ্যচিত্রে। এটি যে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র উৎসবে বিজয়ী হবে, সেটা আমি ভাবিনি। আমি আমার দায়িত্ববোধ আর মনের তাড়না থেকেই এ কাজ করেছিলাম। খুব ভালো লাগছে এ অর্জনের জন্য। আমরা আরো কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে মাটিশ্বর পাঠিয়েছিলাম এবং এটা ব্রাজিল ছাড়াও অন্যান্য উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। সামনে আরো বিভিন্ন উৎসবে পাঠানোর কথা চলছে।’ 

চলতি বছরে দেশের তরুণ নির্মাতারা স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এমনকি অনেক তরুণ নির্মাতার কাজ পুরস্কার অর্জন করেছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন