ঢাবির সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে ঐচ্ছিক ভাবেন কতিপয় শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরলের হাতে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি তুলে দেন ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। কতিপয় শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে ঐচ্ছিক দায়িত্ব মনে করেন। বৈকালিক কোর্স বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়াকেই তারা বেশি অগ্রাধিকার দেন। তবে কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষকসমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গতকাল সভাপতির ভাষণে তিনি কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা জবাবদিহি নিশ্চিত এবং শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়ার জোর তাগিদও দেন আচার্য আবদুল হামিদ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলুন, যাতে তাদের আর বিদেশে পাড়ি দিতে না হয়। ডিজিটাল যুগেও প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট উত্তোলন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ছাত্র-ছাত্রীরা অবহেলা আর হয়রানির মুখোমুখি হন। তাই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ইউনিট চালুর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উপাচার্যের নেতৃত্বে ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই কৃতী সেরা ছাত্র ছিলেন। আমার বিশ্বাস আপনারা যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবদান কার্যক্রম নিয়ে আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, সেশনজট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা-প্রকাশনা মেলা আয়োজন এবং স্টুডেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট চালু করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। শুধু উচ্চশিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়, দেশের নেতৃত্বের প্রতীক এবং ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একসময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, আর তা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাবর্তনে অংশ নেয়া ডিগ্রিধারীদের অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্র্যাজুয়েটরা যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশ জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সত্য ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অধিকতর কার্যকর অবদান রাখবেন বলে আশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক . মুহাম্মদ সামাদ উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক . এএসএম মাকসুদ কামাল। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক . জ্যঁ তিরল। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, ঢাবির সিনেট সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক, অতিথি এবং বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী গবেষকরা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এবারের সমাবর্তনে অংশ নেয়ার জন্য ৩০ হাজার ৩৪৮ গ্র্যাজুয়েট গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেন। অনুষ্ঠানে ১৩১ কৃতী শিক্ষক, গবেষক শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ৯৭ জনকে পিএইচডি, দুজনকে ডিবিএ ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশ নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন