ইউরোপ-এশিয়ায় অ্যাপ স্টোর ফি বাড়াচ্ছে অ্যাপল

বণিক বার্তা ডেস্ক

অ্যাপ স্টোরে বিভিন্ন অ্যাপের ইন-অ্যাপ কেনাকাটায় ফি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। আগামী মাস থেকেই ইউরো অঞ্চল এশিয়ার কিছু দেশে বর্ধিত ফি কার্যকর হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।

অক্টোবর থেকে অ্যাপস ক্রয় এবং এর মাধ্যমে কেনাকাটায় বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে ভোক্তাদের। মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রধান মুদ্রার মূল্যমান কমায় আয়প্রবাহ ধরে রাখতে দাম বাড়াচ্ছে অ্যাপল।

এক বিবৃতিতে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি জানায়, ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী দেশগুলোর পাশাপাশি সুইডেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চিলি, মিসর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ভিয়েতনামের গ্রাহকদেরও আগামী অক্টোবর থেকে অ্যাপলের অ্যাপস ক্রয়ে বেশি দাম দিতে হবে।

ভিয়েতনামে অ্যাপসের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ট্যাক্স সংগ্রহসহ নতুন কিছু নীতিমালাও যোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন দাম বাড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি প্রযুক্তি জায়ান্টটি। তবে ডলারের মূল্যমান বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ফি বাড়ানোর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে বলে জানা গিয়েছে। জাপানে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরে ইয়েনের মূল্য কমার পর দেশটিতে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

গ্রীষ্মের শুরুতেই ম্যাক, আইফোন আইপ্যাডসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে অ্যাপল। কান্তান গেমসের বিশ্লেষক সেরকান টটো জানান, অ্যাপ স্টোর ফি বাড়ানো এবারই নয়। কিন্তু এবার বেশ বড় অংকের ফি বাড়ছে। অ্যাপ গেম ডেভেলপাররা ফি বৃদ্ধির ধাক্কা শিগগিরই টের পাবেন। এখন অনেকেই হয়তো অ্যাপে কেনাকাটা কমিয়ে দেবেন।

পৃথক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত বছর থেকেই ফি বাড়াচ্ছেন অ্যাপ ডেভেলপাররা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাপটোপিয়ার প্রাক্কলনে দেখা গিয়েছে, গত জুলাইয়ে অ্যাপে কেনাকাটায় ফি ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

অ্যাপলের আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই আসে অ্যাপ স্টোর থেকে। ৩১ জুলাই প্রকাশিত অ্যাপলের আয়-ব্যয়ের উপাত্তে দেখা গিয়েছে, কোম্পানি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে পরিষেবা থেকে আয় হয়েছে হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১২ শতাংশ বেড়েছে।

অ্যাপ স্টোর, অ্যাপল টিভি প্লাস, অ্যাপল মিউজিক, ক্লাউড পরিষেবাসহ বেশ কয়েকটি সেবা সেগমেন্টের আওতাভুক্ত। অ্যাপলের বিভিন্ন প্লাটফর্মে পেইড সাবস্ক্রিপশন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ কোটি, গত প্রান্তিকে যা ছিল ৮২ কোটি ৫০ লাখ। গত ১২ মাসে অ্যাপলের পেইড সাবস্ক্রিপশন ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে।

কোম্পানির আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদনে অ্যাপল মুখ্য আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) লুকা মায়েস্ট্রি জানান, আমাদের পরিষেবা পোর্টফোলিওর চাঙ্গা পারফরম্যান্সে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বিভিন্ন ফ্রন্টে আমাদের ইকোসিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

অ্যাপল মিউজিক, অ্যাপল কেয়ার, ক্লাউড সার্ভিস পেমেন্ট সার্ভিস থেকে অ্যাপলের আয় রেকর্ড সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে বলে জানান মায়েস্ট্রি। অ্যাপল টিভি প্লাস পরিষেবা খাতে অ্যাপলের জন্য আরেকটি ইতিবাচক খাত হিসেবে দাঁড়িয়েছে বলে জানান টিম কুক। এখন পর্যন্ত স্ট্রিমিং পরিষেবাটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজার ১১০টি মনোনয়ন পেয়েছে। অস্কার অ্যামি অ্যাওয়ার্ডসহ ২৫০টি পুরস্কার জিতেছে।

গত বছর অ্যাপলের মোট পণ্য পরিষেবা বিক্রির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এসেছে বৃহত্তর চীন থেকে। কিন্তু জুন প্রান্তিকে চীনের বাজার থেকে অ্যাপলের আয় শতাংশ কমে হাজার ৪৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। চতুর্থ প্রান্তিক নিয়ে তেমন পূর্বাভাস শেয়ার করেনি অ্যাপল, তবে দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে বেশ আশাবাদী ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক কোম্পানিটি। আগের মডেলগুলোর মতো আইফোন ১৪ও বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রিমিয়াম স্মার্টফোন সেগমেন্টে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে অ্যাপল। আগের প্রান্তিকে আয় চাঙ্গা থাকলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে বিদ্যমান অস্থিরতায় নতুন বিনিয়োগে অনেক সতর্ক তারা। কিছু বিভাগে ২০২৩ নাগাদ নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন