ইরানি সিনেমা বরাবরই সমালোচকদের প্রশংসা পায়। তবে এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছে একটি ভিন্নধর্মী সিনেমা—হোলি স্পাইডার। পরিচিত ইরানি সিনেমাগুলো সমাজের নানা গল্প নিয়ে তৈরি। তবে ‘হোলি স্পাইডার’
এক সিরিয়াল কিলারের গল্প। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি গত রোববার প্রিমিয়ার করা হয়। দর্শক, সমালোচকদের পক্ষ থেকে সিনেমাটিকে ৭ মিনিটের ‘স্ট্যান্ডিং অভেশন’
দেয়া হয়।
হোলি স্পাইডার পরিচালনা করেছেন ইরানি-ডেনিশ পরিচালক আলী আব্বাসী। মাশাদের এক সিরিয়াল কিলারের বাস্তব কাহিনী উপজীব্য করে সিনেমাটি নির্মিত। ২০০০ থেকে ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মাশাদে ১৬ জন দেহোপজীবিনীর মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয় সাংবাদিক রহীমি এ ঘটনার সমাধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের উদাসীনতায় কাজটি কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রমাগত চেষ্টার মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটিত হয় এবং দেখা যায় সাঈদ নামের এক সাবেক সৈনিক রয়েছে এ হত্যাগুলোর নেপথ্যে। আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনযাপন করা সাঈদ রাত বিরাতে শিকার করে বেড়ায়।
কেবল গল্পই নয়, উপস্থাপনেও ভিন্নতা রয়েছে। এ সিনেমায় সহিংসতা আছে, আছে যৌনতা। সাধারণত ইরানি সিনেমায় এ ধরনের বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। হোলি স্পাইডারের এমন বাস্তব উপস্থাপন অনেকে অপছন্দও করেছেন। শো চলাকালীন বেরিয়ে গিয়েছেন কয়েকজন দর্শক। জর্ডানে শুট করা হোলি স্পাইডার নিয়ে ইরানি সরকার বিরূপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা ইরানে যৌন দৃশ্যসংবলিত সিনেমা অনুমোদিত নয়। তবে সিনেমাটিকে ডেভিড ফিঞ্চারের জোডিয়াকের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এছাড়া বলা হচ্ছে পাম ডি’অরের জন্য সিনেমাটি উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
সিনেমার পরিচালক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমার পুরো ক্রু, অভিনেতা অভিনেত্রীতের জন্য এটি বিশেষ আনন্দের। কিন্তু ইরানি সিনেমার জন্যও এটি বড় ব্যাপার। এটিই অন্তত একটা সিনেমা, যেখানে নারীদের একটা শরীর আছে। তারা মাথায় স্কার্ফ বেঁধে ঘুমায় না।’
সিনেমা প্রিমিয়ারের পর করতালির বন্যা বয়ে যায়। আব্বাসী তখন এ সিরিয়াল কিলিংয়ের বিষয়ে বেশকিছু রেফারেন্স দেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে কথা হলে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের কথা কেউ বলে না। আমার বিশ্বাস এ সিনেমার মাধ্যমে তাদের প্রতি কিছুটা সুবিচার করা হলো।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি ইরানি সিনেমা প্রতিযোগিতা করছে। অন্যটি সাঈদ রৌস্তির লায়লা’স ব্রাদার্স। দুটো সিনেমার কোনোটিই ইরানি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ইরান নতুন কিছু লাভ করবে বলে আশা করা যায়। দুটি সিনেমার পাশাপাশি জুরির সদস্য হিসেবে থাকছেন আসগর ফরহাদি। আশা করা যায় আব্বাসী ও রৌস্তির মতো পরিচালকদের কাজের মাধ্যমে ইরানি সিনেমায় নতুন ধারার সৃষ্টি হবে।
সূত্র: ভ্যারাইটি