স্বপ্ন ছিল মরুর বুকে ব্যাট-বলে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বিশ্বকাপ ছোঁয়া। কিন্তু কথা আর কাজের বাস্তবায়নে স্বপ্নের ফারাকটা অধিকাংশেরই জানা। গতকাল টি২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নও এখন ধূসর। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের কাছে। কিন্তু এ ম্যাচে ইংলিশদের দাপটে সুযোগই পায়নি টিম বাংলাদেশ।
মঈন আলী, টাইমাল মিলস ও লিয়াম লিভিংস্টোনদের বোলিং আক্রমণের কাছে ১২৪ রানেই নতজানু হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় কোনো বেগ পেতে হয়নি তারকাখচিত ইংলিশদের। ৫.৫ ওভার ও ৮ উইকেট হাতে রেখে অনায়াসে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এরপর বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমির পথে আরেকটু এগিয়ে গেল ইয়োন মরগানের দল।
১২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশরা ভালো সূচনা করে। ওপেনিং জুটি ভাঙার আগে ৪.৫ ওভারে ৩৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেন জেসন রয় ও জস বাটলার। লাল-সবুজের অধিনায়ক আগের ম্যাচে শুরুতেই বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্পিনার নাসুম আহমেদকে। এবার হাঁটলেন ভিন্ন পথে। প্রথম ওভারেই নিয়ে এলেন অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে। পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান, এরপর সাকিব, তারপর শরিফুল ইসলাম। তিন অস্ত্র ব্যবহারে কোনোটাই কাজে আসেনি।
পঞ্চম ওভারে তিনি বল তুলে দেন সেই অফস্পিনার নাসুম আহমেদের হাতে। যাকে শেষ দুটি সিরিজ ও বিশ্বকাপের ম্যাচে শুরুতেই ব্যবহার করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। গত ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংসের প্রথম ওভারেই কুশল পেরেরার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এ ম্যাচেও বাংলাদেশকে বল হাতে প্রথম সাফল্য দেন নাসুম। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে বাটলারকে নাঈম শেখের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান এ স্পিনার। ১৮ বলে ১৮ রান আসে ইংলিশ উইকেটকিপারের ব্যাট থেকে। বাটলার দেখে-শুনে খেলে গেলেও রয় ছিলেন বিধ্বংসী রূপে।
এরপর অবশ্য ইংলিশদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড মালান ও রয় দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। দলীয় ১১২ রানের মাথায় শরিফুল ফেরান রয়কে। নাসুমের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে রয় খেলে যান ৩৮ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ইংলিশ ব্যাটার। বাকি কাজটুকু জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে সারেন মালান। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে শরিফুলকে মিড উইকেট দিয়ে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন বেয়ারস্টো। ২৫ বলে ২৮ রান করে মালান ও ৪ বলে ৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন বেয়ারস্টো। বাংলাদেশের হয়ে নাসুম ৩ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ১টি উইকেট। ৩.১ ওভারে ২৬ রান খরচায় শরিফুল নিয়েছেন অপর উইকেটটি।
সুপার টুয়েলভে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় দলে সুযোগ পান পেসার শরিফুল। এ ম্যাচেও একজন বাড়তি স্পিনারই খেলিয়েছে বাংলাদেশ।
আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদউল্লাহ। টস জিতে বড় সংগ্রহ গড়ার পরিকল্পনার কথা জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু মাঠে তার প্রতিফলন নেই। শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ৭৩ রান তুলতেই প্রথম সারির ৫ ব্যাটারকে হারায় তারা। এ ম্যাচেও ধারাবাহিক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি লিটন দাস। ধসের শুরুটা হয় মঈন আলীর হাত ধরে লিটনকে দিয়ে। ৮ বলে ৯ রান করে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে লিয়াম লিভিংস্টোনের তালুবন্দিতে সাজঘরে ফেরেন এ ওপেনার। মঈনের পরের বলেই ক্রিস ওকসকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাইম শেখ। তার উইলো থেকে আসে ৫ রান।
দলীয় ১৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ওয়ানডাউনে চাপমুক্ত করতে নেমে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে ৪ রানের বেশি করতে দেননি পেসার ওকস। দলীয় ২৬ রানে সাকিব আউট হলে রানের চাকায় আরো ভাটা পড়ে। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক দায়িত্ব নেন দলকে বিপদমুক্ত করার। কিন্তু বেশি দূর এগোয়নি এ জুটি। মুশফিককে ফিরিয়ে ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন পার্টটাইম বোলার লিভিংস্টোন। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ইংলিশ ব্যাটার, বল হাতেও কম যান না। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ২৯ রান। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৭৩ রানের মাথায় আফিফ হোসেনও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে তাড়াতাড়ি সাজঘরে ফেরেন। তার নামের পাশে মাত্র ৫ রান। আসা-যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নুরুল হাসান সোহানের ১৬, মেহেদী হাসানের ১১ ও শেষদিকে নাসুমের ৯ বলে অপরাজিত ১৯ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ তোলে বাংলাদেশ।
ইংলিশ বোলারদের মধ্যে মিলস ৩টি, মঈন আলী ও লিভিংস্টোন ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন অর্ধশতক হাঁকানো জেসন রয়।
চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় আর সুপার টুয়েলভে দ্বিতীয় হার শেষে বিমর্ষ মাহমুদউল্লাহ বললেন, অবশ্যই আমরা ব্যাটিং নিয়ে হতাশ। এটা ভালো উইকেট ছিল, যদিও আমরা ভালো সূচনা পাইনি এবং মিডল অর্ডারেও কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। এ উইকেটে ভালো সূচনা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, আমাদের পাওয়ার হিটার না থাকলেও দক্ষ হিটার রয়েছে, কাজেই আমরা বড় স্কোর গড়ার সামর্থ্য রাখি। এখন নিজেদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে পরবর্তী ম্যাচের জন্য ভালো পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে চাই।
আগামীকাল শারজায় নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহদের মতো ক্যারিবীয়রাও প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছে