গত ১৩ জুন থেকে পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) থেকে পুনঃতালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূল মার্কেটে ফিরেছে চার কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস ও মুন্নু ফ্যাব্রিকস। কোম্পানিগুলো মূল মার্কেটে লেনদেন শুরু করার পর থেকেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। গত ১৭ দিনের বাজার পর্যালোচনায় লক্ষ করা যায় আলোচিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল ও পেপার প্রসেসিংয়ের দর তিন গুণ এবং মনোস্পুল পেপার ও মুন্নু ফ্যাব্রিকসের দর আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মনোস্পুল পেপার শেয়ারের দর গত ১৩ জুন ছিল ৫৫ টাকা। যা বেড়ে গত ৩০ জুন দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকা ৩০ পয়সা। সে হিসাবে মাত্র ১৭ দিনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ২ দশমিক ৯২ গুণ।
পেপার প্রসেসিং শেয়ারের দর গত ১৩ জুন ছিল ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। যা ৩০ জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৭ দিনে বেড়েছে ৪২ টাকা বা ৩ দশমিক ৩৮ গুণ।
তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল শেয়ারের দর ১৩ জুন ছিল ১৩ টাকা ২০ পয়সা। যা ৩০ জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা। সে হিসাবে গত ১৭ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩ দশমিক ৩৭ গুণ।
মুন্নু ফ্যাব্রিকস শেয়ারের দর গত ১৩ জুন ছিল ১১ টাকা। ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৯ টাকা ৬০ পয়সা বা ২ দশমিক ৭৮ গুণ।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসা চার কোম্পানির দর অস্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাদের আর্থিক অবস্থা শেয়ারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর্থিক অবস্থার বিপরীতে শেয়ারদর অযৌক্তিক ও সঠিক দরের থেকে একাধিক গুণ বেশি। সেই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে বাজারের একদল কারসাজি করে চলছে। যার কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর মাত্র ১৭ দিনে এত বেশি বেড়েছে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি দরকার। সেই সঙ্গে এসব শেয়ারের দর কারসাজি করে বাড়ানোর পেছনে যারা রয়েছে, তাদের শাস্তি দেয়ার বিষয়ে জানান তারা।
কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন লক্ষ করলে দেখা যায়, মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৫ টাকা ৬ পয়সা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪ টাকা ৭৮ পয়সা বা ৯৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস ১০ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩৭ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা ১ টাকা ২৭ পয়সা বা ৯৩ শতাংশ কমেছে। ৩১ মার্চ ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪১ টাকা ৮ পয়সা।
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ইপিএস হয়েছে ৪৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৩ টাকা ৫৩ পয়সা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩ টাকা ৯ পয়সা বা ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস ৪০ পয়সা। যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা ৭৭ পয়সা বা ৬৫ দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে। ৩১ মার্চ ২০২১ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৪৪ পয়সা।
তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ইপিএস হয়েছে ৯৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৮১ পয়সা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ১৭ পয়সা বা ২১ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস ৩০ পয়সা। যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১১ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা ১৯ পয়সা বা ১৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। মুন্নু ফ্যাব্রিকসের চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৬ পয়সা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ২ পয়সা বা ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস ১ পয়সা। যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ২ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা ১ পয়সা বা ৫০ শতাংশ কমেছে। ৩১ মার্চ ২০২১ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৩৪ পয়সা।