![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_267981_1.jpg?t=1722052971)
বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা বাংলাদেশের উদ্দেশে পাঠাচ্ছে ভারত। এরই মধ্যে ভারতের ঝাড়খণ্ডের ধনবাদ থেকে পাঠানো ৩ হাজার ৮০০ টন কয়লা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দরে খালাস করা হয়েছে। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে তা কয়লাবাহী কার্গোতে করে মোংলা বন্দরের উদ্দেশে পাঠানো হবে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি’র (এনটিপিসি) বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম পিটিআই। খবরে বলা হয়, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) যৌথ কোম্পানি গঠন করে বাস্তবায়ন করছে।
কলকাতা বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান এ কে মেহেরা পিটিআইকে বলেন, আমদানি করার জন্য কয়লাগুলো ধনবাদ থেকে কলকাতা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এখন সেগুলোকে বন্দরে খালাস করা হচ্ছে। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে মোংলা বন্দরের উদ্দেশে এসব কয়লা পাঠিয়ে দেয়া হবে। তিনি জানান, প্রতিটি র্যাকে ৩ হাজার ৮০০ টন কয়লা রয়েছে। প্রথম চালানটি পরীক্ষামূলকভাবে রামপালের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) প্রকল্পটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সেটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। পিটিআই বলছে, রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় চালু হলে প্রতি মাসে ২০ হাজার টন কয়লা কলকাতা বন্দর দিয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে, ভারত থেকে কয়লা আসার খবরে সোচ্চার হয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, ভারত থেকে কয়লা আমদানির খবরটি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়নি। রাষ্ট্রীয় অসামরিক সম্পদ ও অর্থব্যয়-সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনে এ ধরনের গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতা গণতান্ত্রিক নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সই করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, খুশী কবির, শামসুল হুদা, ড. কাজী মারুফুল ইসলাম ও হাসান মেহেদী।
বিবৃতিতে পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতীয় কয়লা পৃথিবীর সব থেকে নিম্নমানের। প্রতি কেজি অস্ট্রেলীয় বা ইন্দোনেশীয় কয়লায় যেখানে ৭০ গ্রাম ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয়, সেখানে ভারতীয় কয়লায় ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয় ৩০০ গ্রাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারতীয় কয়লা দরকার ৭০০ গ্রাম, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা দরকার ৪৫০ গ্রাম ও ইন্দোনেশিয়ার ৫০০ গ্রাম। যে কারণে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য নিজেই অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করে থাকে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ভারত থেকে কয়লা আনার ক্ষেত্রে রায়মঙ্গল-চালনা-মোংলা রুট ব্যবহার করা হবে, যা সুন্দরবনের ভেতরের বলেশ্বর, শিবসা, শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, কালিন্দী, পানগুছি ও রায়মঙ্গল নদী ব্যবহার করা হবে। প্রতি মাসে ভারত থেকে ৩০টি ও আকরাম পয়েন্ট থেকে ৮০টি কয়লাবাহী জাহাজ এসব নদী দিয়ে চলাচল করবে। গত ১০ বছরে সুন্দরবনের শ্যালা, পশুর, কুঙ্গা ও ভৈরব নদ-নদীতে গত ১০ বছরে ১১টি ও ভারতের অংশে নয়টি ফ্লাইঅ্যাশের কার্গো ডুবে যায়। যার মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজার টন ফ্লাইঅ্যাশ, পাঁচ হাজার টন কয়লা, ৩৭০ টন জ্বালানি তেল, ৫০০ টন পটাশিয়াম, ১ হাজার ৩৬ টন জিপসাম ও ৭০০ টন গম সুন্দরবনের নদী ও বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে এর দূষণের সঙ্গে কয়লা পরিবহনের দূষণ যুক্ত হয়ে সুন্দরবনের পানি, মাটি, গাছপালা ও প্রাণসম্পদের যে ক্ষতি হবে, তাতে বিশ্বঐতিহ্য ও বাংলাদেশের এ প্রাকৃতিক ঢাল ধ্বংসের মুখে পড়বে। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও ভারত থেকে কয়লা আমদানির অন্যায্য, অস্বচ্ছ ও গোপন উদ্যোগ বাতিল করতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানান।