৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ১৭ কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন বাকি

আতাউর রহমান

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব কোম্পানির পর্ষদ চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেনি, তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে শেয়ারধারণে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭ কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন বাকি রয়েছে।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিধান করে বিএসইসি। সেই অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিচালকদের হাতে এককভাবে ন্যূনতম শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১১ সালে এমন আইন করা হলেও সেটি পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারণে আইন করার পরও তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত মেনে আসছিল না। আবার অনেক পরিচালক হাতে থাকা সব শেয়ার ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু কমিশনের নির্দেশনার বিরুদ্ধে কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকেরা উচ্চ আদালতে রিট করে। যদিও শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে কমিশনের অনুকূলে রায় আসে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের মে মাসে বিএসইসির পুনর্গঠিত কমিশন ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত আইনটি পরিপালন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৪৩ কোম্পানিকে আইন পরিপালনের জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে গত বছর ২৯ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। এরপর এক দফা সময় বাড়িয়ে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫ কোম্পানি নতুন করে শেয়ার কিনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করেছে। আর সাতটি কোম্পানি শর্ত পূরণে আরো কিছুদিন সময় চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে। আর বাকি ২১টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ২১টি কোম্পানির পর্ষদ সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি। পর্ষদ পুনর্গঠন না হওয়া বাকি ১৭টি কোম্পানি হচ্ছে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস (এএফসি), অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাইন ফুডসফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ফার্মা এইডস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ।

পর্ষদ পুনর্গঠন হওয়া চারটি কোম্পানি হচ্ছে অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) তিনটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই কোম্পানিগুলো হচ্ছে জেনারেশন নেক্সট, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ডেল্টা স্পিনার্স।

বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করা কোম্পানিগুলো অনেক বেশি দরে শেয়ার বিক্রি করে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যে কারণে পরবর্তী সময়ে আইন পরিপালনের জন্য শেয়ার কিনতে পরিচালনা পর্ষদ আগ্রহী হয় না। কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির আগে ব্যবসা ভালো দেখিয়ে শেয়ার ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করে। পরে নিজেদের কাছেই ৩০ শতাংশের কম শেয়ার থাকায় কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং কোম্পনির ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। তাই সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়টি কঠোরভাবে পরিপালনের দিকে নজর দিতে হবে এবং যেসব কোম্পানি শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবে তাদের পর্ষদ পুনর্গঠনে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।

বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন পরিপালনের জন্য সময় দেয়ার পরও যেসব কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনে কাজ করছে বিএসইসি। এরই মধ্যে চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে। একাধিক কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়া সব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। তবে যেসব কোম্পানির পর্ষদ পরবর্তী সময়ে এসে পুনর্গঠনের আগেই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে, তাদের বিষয়ে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।   

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অগ্নি সিস্টেমসের পর্ষদ পুনর্গঠন করে কোম্পানিটির জন্য দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করে বিএসইসি। এছাড়া ন্যূনতম দুজন বা তার অধিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মনোনয়নের জন্য কোম্পানিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মনোনীত একজনকে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির জন্য বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আলহাজ টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়, একই সঙ্গে কোম্পানিটির সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। আলহাজ টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে আলহাজ টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে। অন্যদিকে কোম্পানির সার্বিক তদারকির জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে। ফ্যামিলিটেক্সের পর্ষদ পুনর্গঠন করে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ফ্যামিলিটেক্সের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র দশমিক শূন্য শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন