বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু ২৪ মে —শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি বেসরকারিসব বিশ্ববিদ্যালয়েই ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে শ্রেণীকক্ষে সশরীরে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে ১৭ মে।

গতকাল সোমবার দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবং উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করছেন এবং কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে উঠে গেছেন। বিষয়ে ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা হলে আছে, তাদের অবিলম্বে হল ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করে, তবে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে না। হল খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও নতুন খোলার (বিশ্ববিদ্যালয় খোলার) তারিখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তড়িঘড়ি করে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের করোনা নিয়ন্ত্রণের যে সাফল্য, তা নষ্ট করে দেয়া যেতে পারে না। সরকারি বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট ২২০টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় লাখ ৩০ হাজার। আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। অন্যথায় একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি সব শিক্ষকের টিকাও নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে এক প্রশ্নের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তার আগে করোনা মোকাবেলাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা জানিয়ে দেয়া হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি চলবে। তবে এরইমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। গতকালও হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৭টি।

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর ঢাবিতে বিক্ষোভ: এদিকে আগামী ১৭ মে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবেশিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়ার দাবিতে গতকাল বিকালে তারা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি গ্রহণের পর করা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। সেখানে সাংবাদিকদের উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে হলে উঠবেন না। ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ওপর তার আস্থা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা খুবই দায়িত্বশীল। আপনাদের কাছ থেকেও দায়িত্বশীল সহযোগিতা আশা করি। মহামারী পরিস্থিতিতে যেন আমরা আরো ধৈর্য ধরে, সহনশীল হয়ে দায়িত্বশীলভাবে এগোই। তাহলে মহামারীর ঝুঁকি কমবে, জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকবে না। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা আছে।

উপাচার্য আখতারুজ্জামান আরো বলেন, আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল আগামী ১৩ মার্চ স্নাতক শেষ বর্ষ স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় সিদ্ধান্ত, মহামারী পরিস্থিতি, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া, আমাদের পরীক্ষার তারিখ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে সরকারের সিদ্ধান্তের তথ্যগুলো নেব। শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত, হলে ওঠানো, পরীক্ষা নেয়াএসব বিষয়ে এর আগে একাডেমিক কাউন্সিলের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে।

 

এদিকে উপাচার্যের মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল অমর একুশে হলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিজ দায়িত্বে উঠে পড়েন। তবে কিছুক্ষণ হলের কক্ষে থাকার পর তারা বেরিয়ে যান। এসব শিক্ষার্থী বলেন, তাদের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল খোলার বার্তা দিতে চেয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন