করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুগ্ধ খামারি

মিল্ক ভিটার সদস্যদের ১৩২ কোটি টাকা সহায়তার প্রস্তাব

মেসবাহুল হক

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অন্যান্য খাতের মতো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দুগ্ধ খাতও। অতিমারীর কারণে টানা ছয় থেকে সাত মাস সমবায়ী খামারিদের উৎপাদিত সম্পূর্ণ দুধ সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারেনি বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) এতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মিল্ক ভিটার লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ সদস্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তায় একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে সমবায় মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী এক বছর প্রতি লিটার দুধে টাকা করে ভর্তুকি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি হাজার ৮৪টি সমবায় সমিতির হাজার ১৬৮ জন দরিদ্র প্রান্তিক ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যকে দুটি করে গাভী ক্রয়ের জন্য লাখ টাকা করে অনুদানও দেয়া হবে। এজন্য মিল্ক ভিটার অনুকূলে ১৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শিগগির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের সচিব মো. রেজাউল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, -সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠিয়েছি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় যদি আমাদের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে, তাহলে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক প্রান্তিক দুগ্ধ খামারি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি অর্থ সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, মিল্ক ভিটা দেশের আটটি বিভাগের ৪২ জেলার ১৩৮টি উপজেলায় ৪৮টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের আওতায় লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ সদস্যের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ লিটার কাঁচা তরল দুধ সংগ্রহ করে, যা দিয়ে দুগ্ধ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন বাজারজাতের মাধ্যমে দেশের জনগণের দুগ্ধ চাহিদা পূরণে পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারীতে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের আওতাধীন প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির দরিদ্র প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের দুগ্ধ উৎপাদন, বিপণন, গাভীর খাদ্য সংকট এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাসহ যাবতীয় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন দেশে লকডাউন নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মিল্ক ভিটার পক্ষে সমবায়ী খামারিদের উৎপাদিত সম্পূর্ণ দুগ্ধ সংগ্রহ করে বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানেও কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিভিন্ন পেশা শ্রমজীবী মানুষের আয় কমে যাওয়ার কারণে এখনো দুগ্ধ দুগ্ধপণ্যের বাজার ব্যবস্থা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসেনি। অবস্থায় কভিড-১৯-এর সংকট মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সদস্যদের দুগ্ধ উৎপাদন, অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সদস্যদের প্রতি লিটার দুধের জন্য টাকা ভর্তুকি দেয়া অত্যন্ত জরুরি। গত ডিসেম্বর থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মিল্ক ইউনিয়নের আওতাধীন সব সমিতির উৎপাদিত সম্পূর্ণ দুধ অর্থাৎ প্রায় আট কোটি লিটার দুধ সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার দুধের জন্য টাকা ভর্তুকি মূল্য প্রদান করা হলে আট কোটি লিটার দুধের জন্য ৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সমবায় আইন ২০০৪-এর ৭৭ ()-এর () অনুচ্ছেদ মোতাবেক সরকার মিল্ক ভিটাকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। এছাড়াও কভিড-১৯-এর মহামারীতে হাজার ৮৪টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির দরিদ্র প্রান্তিক ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের ক্ষতি পুষিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রত্যেক সমিতিতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এমন দুজন সদস্যকে দুটি গাভী ক্রয়ের জন্য লাখ টাকা করে অনুদান হিসেবে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন। এতে হাজার ৮৪ সমিতির জন্য

মোট ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। সর্বমোট ১৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকা মিল্ক ভিটাকে অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হলো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন