ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে ২০২১

অস্থিরতার মূলে জ্ঞানভিত্তিক বিনিয়োগ সক্ষমতা ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্ঞানভিত্তিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ন্যূনতম আর্থিক যোগ্যতা না থাকাকেই পুঁজিবাজারের বিদ্যমান অস্থিরতার কারণ মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে ২০২১- অংশগ্রহণকারী ৮২ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া আইপিও ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সংস্কার করার কথা বলছেন অংশগ্রহণকারীরা।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪১ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন ২০২০ সালে পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স মাঝারি মানের ছিল। সময় কভিড-১৯-এর ধারাবাহিক প্রভাবের প্রতিফলন পুঁজিবাজারে ঘটেছে বলে মনে করছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকে পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছেন ৫৪ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক শতাংশ মনে করছেন বছর ভালো কোম্পানির আইপিও পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক হবে। চলতি বছর শেষে ডিএসইএক্স সূচক হাজারের উপরে যাবে বলে মনে করছেন ৪০ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৫১ দশমিক শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রত্যাশা করছেন যে ২০২১ সালে পুঁজিবাজার মাঝারি মাত্রায় ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪১ দশমিক শতাংশ মধ্যমেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী। বছর ওষুধ খাতের শেয়ার সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করবে বলে মনে করছে ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আর ৫০ শতাংশ খাতের আরো কোম্পানি আইপিওতে দেখতে চাইছেন। জরিপে অংশ নেয়া ৫১ দশমিক শতাংশ মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগ প্রণোদনা পুঁজিবাজারকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। ৫২ দশমিক শতাংশ মনে করছেন বছর পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অতিমারীর প্রভাবে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী। ডেরিভেটিভ মার্কেট অবিলম্বে প্রয়োজন বলে মনে করছেন ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা। বিভিন্ন শ্রেণীর সম্পদের মধ্যে ২০২১ সালে শেয়ার সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করবে বলে জানিয়েছেন ৪৩ দশমিক শতাংশ অংশগ্রহণকারী। বিনিয়োগকারীদের আস্থা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ২০২০ সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল বলে মনে করছেন বেশির ভাগ উত্তরদাতা।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাজারকে আরো স্বচ্ছ গতিশীল করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলে মনে করছেন ৬৬ দশমিক শতাংশ অংশগ্রহণকারী। প্রয়োজনীয় জ্ঞানের ঘাটতিকে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন অর্থেকের বেশি উত্তরদাতা। কৌশলগত চীনা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করছেন ৫৮ দশমিক শতাংশ অংশগ্রহণকারী। কাউন্টারপার্টি ক্লিয়ারিং কোম্পানি গঠনের ফলে ক্লিয়ারিং সেটলমেন্ট কাঠামোর উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ৫৮ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা। ৬৪ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন এসএসই এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা হলে পুঁজিবাজারে মানসম্মত আইপিও আসতে উৎসাহিত হবে এবং ৭০ শতাংশ মনে করছেন সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন হলে তা পুঁজিবাজারকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

দেশের পুঁজিবাজারের পরিপূর্ণতা মাঝারি মানে বলে মনে করছেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৭ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা। অবশ্য বেশির ভাগ উত্তরদাতাই মনে করছেন চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাজারের পরিপূর্ণতা বাড়াতে হলে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে লেনদেন বিধিমালা উন্নত করা এবং লেনদেনের বিস্তৃতি বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। বাজার কারসাজি জালিয়াতিকে সামনের দিনগুলোতে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে জটিল নৈতিক ইস্যু বলে মনে করছেন ৫১ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এখনো সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন ৬১ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা। বিএসইসির পারফরম্যান্সকে মাঝারি মানের বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। একইভাবে ডিএসইর পারফরম্যান্সকেও মাঝারি মানে বিবেচনা করছেন তারা। আইপিওর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ৫৬ দশমিক শতাংশ অংশগ্রহণকারী। স্থানীয় কোম্পানিগুলোর করপোরেট সুশাসন দুর্বল বলে মনে করেন বেশির ভাগ উত্তরদাতা। ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মতে গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আর্থিক প্রক্ষেপণ করা হলে সেটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হবে। পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়াতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন প্রবর্তন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ৮৬ দশমিক শতাংশ উত্তরদাতা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন