মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ভাতা বর্তমানের ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার ঘর নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সম্মানী ভাতা পাঠানো কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে আমি মনে করি, ১২ হাজার টাকা সময় কিছুই নয়। একে আমরা ২০ হাজার টাকা করে দেব। এটা করতে একটু সময় নেব। কারণ বাজেটে টাকা বরাদ্দসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করতে একটু সময় লাগবে। তবে এটা আমরা করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) সাহায্যে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতার প্রচলন করেছে। ফলে কারো কাছে আর চাইতে হবে না, সরাসরিই তারা সেলফোনে টাকা পেয়ে যাবেন। কারণ স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হন, তা হতে পারে না।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।     

লাখ হাজার ১৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার বর্তমানে সুবিধা পাচ্ছেন। এখন থেকে প্রতি মাসে লাখ ৬৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসেই সেলফোনের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাবেন।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে লাখ ৯২ হাজার ৫৩২- উন্নীত করা হয়েছে। তাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ভাতা বহুগুণ বাড়িয়ে মাসিক ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে তিন মাস অন্তর জেলা, উপজেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দেয়া হতো। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে।

পিএমও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরন ভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হাজার ৮১৬ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার বীর প্রতীক খেতাবধারীরা মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

সম্মানী ভাতার পাশাপাশি শহীদ, যুদ্ধাহত সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং তারামন বিবিসহ বীর প্রতীক হিসেবে মোট ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রেশনসামগ্রীও পান। সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষে সব যুদ্ধাহত, শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের আইন পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ১১ হাজার ৯৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন